করোনা মহামারির সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। রোববার (২৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ডিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন ইউনিটে লকডাউনসহ বিভিন্ন সময় নিরাপত্তা দিতে গিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পদ মর্যাদার ১৮ হাজার ৮১১ জন সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৮২ জন। এখনো চিকিৎসাধীন আছেন ৩১৭ জন।
মোট আক্রান্ত ১৮ হাজার ৮১১ জনের মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি ৬ জন, ডিআইজি ১০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৯ জন, পুলিশ সুপার ১১২ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১৮৭ জন, সহকারী পুলিশ সুপার ২২৮ জন, ইন্সপেক্টর ৯৫৭ জন, এসআই ৩ হাজার ৭ জন, এএসআই ২ হাজার ৮৩৫ জন, নায়েক ৫৫০ জন, কনস্টেবল ৮ হাজার ৮২৩, অন্যান্য ২ হাজার ৭৭ জন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন, পরিষ্কার-পরিছন্ন ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিজে আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মোট ৩ হাজার ১৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ হাজার ১১১ জন। এতে মারা গেছে ২৫ জন। এছাড়া এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৪২ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে যুগ্ম-কমিশনার ৩ জন, উপ-পুলিশ কমিশনার ১৬ জন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ৫০ জন, সহকারী পুলিশ কমিশনার ২৯ জন, ইন্সপেক্টর ১৮০ জন, এসআই ৫৮৮ জন, এএসআই ৫০৫ জন, নায়েক ১০৭ জন, কনস্টেবল ১ হাজার ৫৫৩ জন ও অন্যান্য ১৪৭ জন।
করোনাকালে পুলিশ কর্মকর্তারা অনেক মানবিক আচরণ করেছেন। যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। আক্রান্তদের সহায়তা থেকে শুরু করে করোনা রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, আক্রান্ত পরিবারের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
এছাড়া ডিএমপির পক্ষ থেকে প্রত্যেক থানা এলাকায় রান্না করা খাবার অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা-সামগ্রী বিতরণ ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় জীবাণুনাশক পানি ছিটিয়েছে পুলিশ।
মহামারি চলাকালে অনেকেই সংক্রমণের ভয়ে আক্রান্তদের পাশে না গেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ উপস্থিত হয়েছে। এমনকি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থাও করেছে পুলিশের সদস্যরা। জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করেছে তারা। যেখানে পরিবারের কেউ এগিয়ে আসেনি সেখানে তারা পিছপা হয়নি। এমন কার্যক্রম করতে গিয়ে একক পেশা হিসেবে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে পুলিশের সদস্যরা। তার সিংহভাগই ডিএমপির সদস্য।
করোনার প্লাজমা দিতেও থেমে থাকেনি পুলিশ। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য নিজেরা সুস্থ হয়ে আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্লাজমা দিয়েছেন। করোনাকালে আক্রান্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের নানাভাবে পুলিশ সদর দফতর ও ডিএমপির পক্ষ থেকে চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহায়তা করা হয়েছে।
নদী বন্দর / পিকে