ফরিদপুরে গত ছয়দিন ধরে বেড়েই চলেছে পদ্মার পানি। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও রান্না নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
এছাড়া পানি বাড়ায় দেখা দিয়েছে নদীর তীব্র ভাঙনও। ভাঙনকবলে পড়েছে কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও বসতভিটা।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি সাত সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, পদ্মার পানি বাড়ায় ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল, ডিক্রিরচর, চরমাধবদিয়া ও ইমান গোপালপুর ইউনিয়নের কমপক্ষে ৫০টি গ্রামের অন্তত ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিক্রিরচর ইউনিয়নের দুটি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু বলেন, আমার ১২টি গ্রাম বন্যাকবলিত। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা আছে। পানি বাড়তে থাকলে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে। এরই মধ্যে রোববার থেকে আইজউদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী ও নাজির বিশ্বাসের ডাঙ্গীতে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পানির তোড়ে নাজিম বিশ্বাসের ডাঙ্গী গ্রামের সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ এবং ব্যাপারী ডাঙ্গী সড়কের ৫০ মিটার অংশ পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। দিন দিন ঝুঁকি বাড়ছে।
নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান জানান, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে তার ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। শুকুর আলী মৃধার ডাঙ্গী গ্রামের ১৬ একর, আলিমুদ্দিন মাতব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের ৩ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের কাইমুদ্দিন মাতব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, আমার বাড়ির আশপাশের সব বাড়ি তলিয়ে গেছে। আমার উঠোনেও পানি। এইভাবে পানি বাড়লে ভিটেমাটি ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
একই ইউনিয়নের সুলতান খাঁর ডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ সমিরন বিবি বলেন, আশপাশে পানি থইথই করছে। সব রাস্তাও তলিয়ে গেছে। পানি আর একটু বাড়লে ঘরে ঢুকা যাবে। তখন আমরা যারা সাঁতার জানি তারা না হয় কোনোভাবে টিকতে পারবো। সমস্যায় পড়বো বাচ্চা আর গরু-ছাগল নিয়ে।
চর মাধবদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সাইফুল ইসলাম আজম বলেন, যে সাহায্য সরকার থেকে আসছে তা নিয়ে জনগণের কাছে গেলে লজ্জায় পড়তে হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তুলনায় ত্রাণ সহায়তা খুবই কম। আমার ইউনিয়নে পানিবন্দি প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার। বিপরীতে বরাদ্দ পেয়েছি ১০০ প্যাকেট খাবার।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করছি আগামী দু-তিনদিন পর থেকে পানি কমতে শুরু করবে।
ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুম রেজা বলেন, বন্যার ঝুঁকিতে থাকা সদরের তিনটি ইউনিয়নের জন্য এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৪০০ প্যাকেট শিশু খাদ্য ও ২০০ বস্তা (প্রতি গরুর জন্য এক বস্তা) গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, এরই মধ্যে নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের দুর্গত ৪০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বাকি দুটি ইউনিয়নের ৩৫০ পরিবারের মধ্যে রোববার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডিক্রিরচরে ২৫০ প্যাকেট ও চর মাধবদিয়া ইউনিয়নে ১০০ প্যাকেট ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্যাকেটের মধ্যে রয়েছে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, আধা লিটার তেল, আধা কেজি চিড়া ও আধা কেজি চিনি।
নদী বন্দর / পিকে