1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
টাঙ্গুয়ার হাওরে জনপ্রিয় ১০ টাকার রং চা - Nadibandar.com
মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৯ অপরাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১
  • ১৬৩ বার পঠিত

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায় অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর। সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর থেকে দেশের নানা প্রান্তের পর্যটকদের ঢল নেমেছে ৫১ বিলের সমন্বয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওরে। এ হাওরে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ১০টা দামের রং চা। বিশেষ করে ঘুরতে আসা পর্যটকরা পানিতে নেমে গলা বা বুক পর্যন্ত ভিজিয়ে চুমুক দিচ্ছেন চায়ে। এ মুহূর্তটি স্মার্টফোনের ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি করে রাখছেন অনেকে।

সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, সরকারের বিধিনিষেধ কেটে যাওয়ায় সারাদেশের মতো খুলেছে এখানকার সব স্পট। সচল হয়েছে নৌকাও। ফলে প্রতিদিনই ভোর থেকে হাজারো পর্যটক আসছেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। তাদের পদচারণায় হাসি ফুটছে হাওরপাড়ের কর্মহীনদের মুখেও। পাঁচ শতাধিক মানুষের এখন জীবিকা নির্বাহের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে হাওর এলাকা। তারা ফেরি করে, অস্থায়ী দোকান বসিয়ে অথবা ছোট নৌকায় বিক্রি করছেন চা, বিস্কুট, পান, মুড়ি, সিগারেটসহ নানা পণ্য।

এমনই দুজন বিক্রেতার নাম মতিন মিয়া (৩২) ও সাহানুর মিয়া (৪০)। হাওর এলাকায় রং চা বিক্রি করেন দুজনে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাওরপাড়ে যে খাদ্যপণ্য বিক্রি হয়, তা কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। এ নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে খুব বেশি অসন্তোষ দেখা যায় না।

বরং পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে আধাকাপ রং চা, যার দাম রাখা হচ্ছে ১০ টাকা। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের কাপে এই চা নিয়ে অনেকে হাওরে নেমে পড়েন। সেখানে গা ভিজিয়েই চুমুক দেন চায়ে। কেউ কেউ একেবারে গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে কাপ হাতে নিয়ে হন ক্যামেরাবন্দি। এভাবে ফ্রেমবন্দি হওয়াই যেন এখন হালের ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের মধ্যে।

jagonews24

টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারের নিচে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন তরুণ দল বেঁধে পানিতে নেমে গোসল করছেন। কয়েকজন নৌকা থেকে পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি করছিলেন। তাদের পাশে থাকা ছোট নৌকা থেকে রং চা দিচ্ছিলেন এক বিক্রেতা। ১০ টাকায় সেই চা কিনে আয়েশ করে চুমুক দিচ্ছেন কয়েকজন।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটক সামি খান বলেন, ‘বন্ধুরা মিলে ঘুরতে এসেছি, এখানে এসে ঘণ্টাখানেক হলো হাওরের পানিতে শরীর ডুবিয়ে মাথা বের করে রং চা খাচ্ছি। এভাবে চা খাওয়ায় যে আনন্দ সেটা বলে বোঝাতে পারবো না।’

পর্যটক রুবেল আহমেদ আগে কখনো রং চা না খেলেও টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে এর স্বাদ নিয়েছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি আগে কখনো রং চা খাইনি। এখানে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে চা খাচ্ছি, ভালোই লাগছে।’

jagonews24

পরিবারের সবাইকে নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে এসেছেন সুফিয়ান আহমেদ। দীর্ঘক্ষণ নৌকায় চড়ায় তার বেশ মাথা ধরেছিল। সেজন্য নৌকা থেকে নেমেই এক কাপ চা খেয়েছেন সুফিয়ান। তিনি বলেন, ‘এখানে চায়ের দাম বেশি হলেও এমন স্বাদ দেশের আর কোথাও নেই বলা যায়।’

পর্যটক মিলন আহমেদ বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে এসে অনেক মজা ও হইচই করেছি। করোনা আমাদের জীবন থেকে অনেক আনন্দময় দিন কেড়ে নিয়েছে। এখন সুযোগ পেয়ে মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে শ্বাস নিচ্ছি।’

দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার বেড়ে যাওয়ায় গত ১১ জুন সুনামগঞ্জের সব পর্যটন এলাকায় জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় টাঙ্গুয়ার হাওর, নীলাদ্রি, টেকেরঘাট, বারেকটিলাসহ পর্যটন এলাকা। এ বিধিনিষেধের কারণে পর্যটন এলাকার মানুষ বেশ কষ্টে ছিল। ১৯ আগস্ট থেকে বিধিনিষেধ কেটে যাওয়ায় এখন পর্যটকের পদচারণায় মুখর সেসব পর্যটনকেন্দ্র। ফলে দুঃসময় কেটেছে কষ্টে থাকা কর্মহীনদের।

jagonews24

টাঙ্গুয়ার হাওরে নৌকা নিয়ে চা বিক্রি করা মতিন মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর্যটকরা আসেননি। সেজন্য পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটিয়েছি। কিন্তু বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় প্রতিদিন হাজারো পর্যটক টাঙ্গুয়ার হাওরে আসছেন। এতে আমাদের ভাগ্য খুলেছে। আমরা ছোট নৌকায় চা, বিস্কুট, পান, সিগারেট, মুড়ি বিক্রি করি পর্যটকদের কাছে।’

মতিন মিয়া জানান, হাওরে এখন সবচেয়ে বেশি রং চা খান পর্যটকরা। আধা কাপ রং চায়ে দেশীয় লেবুর পাতা দেওয়া হয়, যা পর্যটকরা খেয়ে খুব তৃপ্তি পান। দাম রাখা হয় ১০ টাকা। এভাবে দৈনিক ৬০০-৭০০ টাকার মতো রোজগার হয় তাদের।

jagonews24

আরেক চা বিক্রেতা সাহানুর মিয়া বলেন, ‘আমরা হাওরপাড়ের মানুষ, আমাদের খোঁজখবর কেউ রাখে না। পর্যটকরা টাঙ্গুয়ার হাওরে এলে আমাদের পেটে ভাত পড়ে। বর্তমানে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের মিলনমেলা চলছে। এখন প্রায় ৫০টি নৌকা চা-বিস্কুট নিয়ে হাওরে ঘুরে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করছে। পর্যটকরা আসায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমরা দুবেলা ভাত খেতে পারছি।’

তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, ‘পর্যটকরা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাওরে ঢোকেন সেজন্য আমরা মাঠে কাজ করছি। এরই মধ্যে পুরো তাহিরপুর উপজেলায় মাইকিং করা হয়েছে। যারা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে হাওরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তাদের মধ্যে ১৪ পর্যটককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া আমরা পর্যটনকেন্দ্রের নৌকাঘাটে মাস্ক বিতরণ করেছি।’

নদী বন্দর / সিএফ

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com