চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকায় আব্দুর রশিদ টিটো মিয়া বাণিজ্যিকভাবে ছাদ বাগান করে চমক সৃষ্টি করেছেন। বাগানজুড়ে সবুজের সমারোহ। তার বাগানে আছে দেশি-বিদেশি প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাছ। তিনি করোনাকালে প্রতিমাসে অনলাইনে গাছের চারা বিক্রি করে আয় করছেন ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। তার বাগান দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
তিনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বোনের দেওয়া ই-ফোরবিয়া গাছদিয়ে তার নিজের গড়া ছাদে বিশাল বাগান গড়ে তুলেছেন। অবিশ্বাস্য পরিকল্পনা তার। জমি না থাকলে ছাদেও যে বাণিজ্যিকভাবে বাগান করে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় তারই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেছেন আব্দুর রশিদ টিটো মিয়া। অসম্ভব পরিশ্রম, আধুনিক চিন্তা-ভাবনা ও সৃজনশীল গুণী মানুষ টিটো মিয়া (৬০)। এ বয়সেও বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসা সবাইকে মুগ্ধ করেছে।
টিটো মিয়ার পার্শ্ববর্তী বাড়ির মালিক মুকুল হোসেন বলেন, ওনার মতো গাছ পাগল মানুষ আর দেখিনি। গাছের প্রতি তার প্রচণ্ড ভালোবাসা। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গায় প্রতিষ্ঠিত সব নাসার্রী তার হাতে গড়া।
টিটো মিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে হুমায়রা সিনথিয়া বলেন, শৈশব থেকে আমি দেখে আসছি আমার বাবা ছাদে গাছ লাগাতে লাগাতে বাগান তৈরি করেছেন। তিনি তখন করতেন শখের বশে। এখন অনলাইন বিজনেস করছেন। করোনার কারণে বাবার অন লাইন বিজনেস থেমে থাকেনি।
করোনার মধ্যে তার অনলাইন বিসনেজ চালু ছিল। অনেক গাছ বিক্রি করেছেন। একজন নারী হিসেবে আমি বলবো, নারীরাও ছাদ বাগান করতে পারি। এটা করতে জমি লাগে না। যাদের বাসা আছে, ছাদ সবারই কম বেশি আছে। ছাদে আমরা ছাদ বাগান গড়ে তুলে অনলাইনে এই গাছ সেল করতে পারি।
গাছ সংগ্রহ প্রসঙ্গে আব্দুর রশিদ টিটো মিয়া বলেন, যাদের নার্সারি আছে তাদের কাছ থেকে আমাদের মতো যারা গাছ প্রেমিক তারা গাছ কিনে থাকি। আবার এই গাছ যত্নের মাধ্যমে বড় করে বিক্রি করে আবার নতুন গাছ সংগ্রহ করি। তিনি জানান, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে ই-ফোরবিয়া গাছ দিয়ে আমি ছাদ বাগান শুরু করি।
প্রথমে শখের বশে গাছ সংগ্রহ করলেও এখন সেটা সময়ের পরিবর্তনে বাণিজ্যিক রূপ লাভ করেছে। আমার একটা ফেসবুক আইডি আছে যার মাধ্যমে আমি ছবি আপলোড দিই। দর্শকরা যে গাছ পছন্দ করে তার দাম নিধার্রণ হলে গাছ পেকিং করে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিই।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিন রাব্বি বলেন, জমি না থাকলেও বাণিজ্যিক ছাদ বাগান করে অনেক বেকার যুবক-যুবতী অনলাইনের মাধ্যমে বেচা-কেনা করে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে পারে। করোনাকালে শুধু তরুণরাই নয় যে কোনো বয়সের মানুষই ছাদ বাগান করতে পারে। জমি না থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ছাদ বাগান করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।
ছাদ বাগান সৌন্দর্য বর্ধনের সাথে কর্মসংস্থান করাও যে সম্ভব তার জ্বলন্ত উদাহরণ টিটো মিয়া। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ প্রশিক্ষণ সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধির কারণে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। বাড়তি চাহিদা মেটানোর জন্য কৃষিকে আমরা ভারট্রিক্যালে বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছি। যারই ফলশ্রুতিতে আমাদের অনেক মানুষ শখের বশে ছাদে বাগান করছে।
এতদিন পর্যন্ত বাগানগুলো শখের বশে দেখতাম। কিন্তু আমাদের চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার পুরাতন হাসপাতাল পাড়ায় আব্দুর রশিদ টিটো নামে এক ভদ্র লোক প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিভিন্ন প্রজাতির সৌখিন জাতীয় গাছের চারা সংগ্রহ করে এবং সেখানে উৎপাদন করছে।
করোনাকালে মানুষ বেকার হয়ে যখন চাকরি হারাচ্ছেন সেই মুহূর্তে অন লাইনে চারা সরবরাহ করে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা রোজগার করছেন টিটো মিয়া। গত বছর আমরা টিটো মিয়াকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। আর বিশেষ করে যারা শিক্ষিত বেকার আছে তারা টিটো মিয়াকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাগান করছে এবং অনলাইনের মাধ্যমে তারা টিটো মিয়ার মতো গাছের চারা বিক্রি করে বেকারত্ব ঘুচাতে পারে ।