দক্ষিণের উপকূলীয় সৈকত কুয়াকাটা, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন নদীতেও একের পর এক ভেসে আসছে মৃত ডলফিন, রাজ কাঁকড়া, তিমিসহ অন্য সামুদ্রিক প্রাণী। ভেসে আসা প্রাণীগুলো তড়িঘড়ি করে মাটিচাপা দেয় প্রশাসন। মৃত প্রাণী সংরক্ষণ কিংবা গবেষণার কোনো ধরনের উদ্যোগ কখনো দেখা যায়নি। এতে এসব প্রাণীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ থেকে যাচ্ছে অজানা। ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতি।
গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার ডলফিনের মৃত্যু বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটি।
কয়েক বছর ধরে এসব সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু হলেও বেশিরভাগ সময় মাটিচাপা দিয়ে দায় সারছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং বনবিভাগ। এ কারণে অজানাই থেকে যাচ্ছে প্রাণীগুলোর মৃত্যুরহস্য।
গত বছরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ও তার আশপাশে বেশকিছু ডলফিন ও তিমি ভেসে এসেছে, তবে বর্তমানে সংখ্যাটা বেশি। ২০১৮ সালে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে একটি তিমি ও দুটি ডলফিন, ২০১৯ সালে ২০ কেজি ওজনের একটি কচ্ছপ ও তিনটি ডলফিন, ২০২০ সালে একটি তিমি, একটি কচ্ছপ ও পাঁচটি মৃত ডলফিন ও ২০২১ সালে ১৪টি মৃত ডলফিনসহ রাজ কাঁকড়া ও কচ্ছপের মরদেহ পাওয়া যায়।
এর মধ্যে আগস্ট মাসেই ইরাবতি, শুশুক ও গঙ্গা নদীর ডলফিনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৃত ৯টি ডলফিন ভেসে আসে। বছর যেতে না যেতেই এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬টিতে। যা অন্য বছরগুলোর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
পান্জুপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব জেলে মতিউর রহমান বলেন, সৈকতে এই মরা প্রাণীগুলো আরও দশ-পনেরো বছর আগে থেকেই ভেসে আসতো। কিন্তু তখনকারগুলো অনেক বড় দেখতাম, আর সংখ্যায়ও কম ছিল। এখনকারগুলো আকারে ছোট, সংখ্যায়ও বেশি।
ভেসে আসা প্রাণীর শরীরে প্রায়ই আঘাতের চিহ্ন, জালে আটকানোসহ মুখ থ্যাঁতলানো লক্ষ্য করা যায়। তাই অনেকেই মনে করেন এগুলো জেলেদের জাল থেকে ছাড়ানোর সময় অনেকটা অবহেলার কারণও হতে পারে।
স্থানীয় জেলে বশির জানান, তাদের জালে নয়, বরং ভারতীয় ও দেশি ট্রলিংয়ের জালে মৃত্যু হচ্ছে এসব প্রাণীর।
কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির টিম লিডার রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সৈকতে মৃত ডলফিন ভেসে আসার সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে। কিন্তু তাদের মৃত্যুর আসল কারণটা কেউ জানতে পারছে না।
তিনি বলেন, এই মৃত্যু বন্ধ করতে হলে অবশ্যই এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। ডলফিনের প্রতি ভালোবাসা ও সচেতনতা বাড়াতে জেলেদের শতভাগ প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি জালে আটকেপড়া ডলফিন যত্ন সহকারে ছাড়ানোসহ টুকরো জাল ও পলি প্লাস্টিক সমুদ্রে ফেলা বন্ধ করা জরুরি।
কুয়াকাটা প্রেস ক্লাব সভাপতি নাসির উদ্দীন বিপ্লব বলেন, কুয়াকাটা সৈকতে বিভিন্ন প্রজাতির যে প্রাণী ভেসে আসছে এগুলোকে মাটিচাপা না দিয়ে যদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হতো তাহলে হয়তো দ্রুত মৃত্যুর কারণ উদঘাটন হতো।
ইউএসএআইডি/ওর্য়াল্ডফিশ বাংলাদেশের (ইকোফিশ-২) অ্যাক্টিভিটির সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, জলজ প্রাণীগুলো মানুষের সঙ্গে বন্ধুসূলভ আচরণ করে। ঠিক কী কারণে এসব প্রাণী মারা যাচ্ছে সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে জেলেদের অবহেলা ও সমুদ্রে ছেঁড়া জালে আটকে তাদের মৃত্যু হচ্ছে, এটা প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এ্যামদাদুল্লাহ জানান, সৈকতে কিছুদিন ধরে মৃত ডলফিন ভেসে আসছে, এতে আমরাও উদ্বিগ্ন। আসলে এ মৃত্যুর কারণ গবেষণা করা দীর্ঘমেয়াদি কাজ। প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা গভীর সমুদ্রে থাকা ট্রলিং ও ছেঁড়া জালে আটকে এদের মৃত্যু হচ্ছে।
নদী বন্দর / জিকে