রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এবছর পাটের বম্পার ফলন হয়েছে এবং দাম ভালো পাচ্ছেন। কৃষক, কৃষি শ্রমিকগণ পাট কেটে পানিতে জাগ দেওয়ার পর পাটের সোনালী আঁশ ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এক সময় বলা হতো সোনালি আঁশ কৃষকের গলার ফাঁস। এখন সে অবস্থা আর নেই। পাঠের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় সোনালি আঁশ পাটের সুদিন ফিরে আসতে শুরু করছে।
ছড়ানো পাট রোদে ভাল করে শুকানোর পর কৃষকরা বিক্রি করতে হাট বাজারে নিয়ে যাচ্ছে। পাটের মৌসুমের শুরুতেই কৃষক ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকেরা দারুন খুশি।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর উপজেলায় পাটের আবাদ হয়েছিল ৯শ’ হেক্টর জমিতে। গোদাগাড়ীতে চলতি মৌসুমে পাট চাষ হয়েছে ১ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমান জমিকে পাট চাষ হয়েছে । তবে কিছু জমির পাট কৃষকগণ শাঁক হিসেবে কেটে বিক্রি করেছেন সেখানে তার ভাল লাভবান হয়েছেন। কেন না ১ আঁটি পাট শাঁক বিক্রি হয়েছে ২০/২৫ টাকায়।
জমি থেকে পাট কেটে জাগ দেয়ার পর পাটের আঁশ আলাদা করে শুকিয়ে বিক্রিও করছে কৃষকরা। শুধু উপজেলায় চর আষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়নে পাটের চাষ হয় প্রায় ৬শ’ ৫০ হেক্টোর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।
চর আষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়নের পাট চাষী জোহরুল ইসলাম জানান, এবার ১০ বিঘা জমিতে সে পাট চাষ করেছেন। জমির পাট কেটে জাগ দিয়েছেন। কিছু জাগ তুলে আঁশ ছড়ানো শুরু করে দিয়েছে। তার পাট চাষ করতে বিঘা প্রতি ৬ হাজার ৫শ টাকা করে খরচ হয়েছে। আর বিঘা প্রতি তার পাট ৮ থেকে ১০ মন করে হচ্ছে। বিদিরপুর এলাকার পাট চাষি শরিফুল ইসলাম জানান, গত বছর পাট চাষ করে কৃষকগণ লাভবান হয়েছিল। এবার পাটের বাম্পার ফলন হওয়া মৌসুমের শুরুতে উৎপাদিত পাটের দাম বেশী কৃষকগণ বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পাট প্রতি মণ ৩ হাজারম ১শ থেকে থেকে সাড়ে ৩ হাজার ৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার বিদিপুরহাটে গিয়ে দেখা যায় পাটচাষিরা, গরু, মহিষের গাড়ি, টেম্পু, অটোতে বোঝায় করে বিক্রির জন্য পাট নিয়ে যাচ্ছে, বিক্রি করে দাম ভাল পাওয়ায় তার দারুন খুশি। ছেলে মেয়েদের জন্য নতুন জামা ক্রয় করছেন, মাছ, মাংশসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করছেন, সার, কীটনাশকের দোকানের বকেয়া পরিশোধ করছেন। পাটের আড়ৎগুলি বেশ জমজমাটভাবে চলছে। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিক, মালিকগণ কাজ করছেন। ক্রয়কৃত পাট বান্ডিল তৈরী এবং ট্রাক বোঝায় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।
পাট চাষীরা বলেন , এবছর ও বন্যা বৃষ্টি হওয়ায় খালে-বিলে পানির অভাব নেই। এসব জায়গায় পানি থাকায় পাট জাগ দিতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। আঁশের গুণগত মান ভাল হচ্ছে। অন্যান্য বছর পাট জাগ দেয়া নিয়ে বেশ সমস্যা হয়েছে।
জমিতে পাট চাষ করে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে তাদের শুধু সোনালী আঁশ বিক্রি করেই ১০ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। বাড়তি হিসাবে পাওয়া যায় পাটের খড়ি। সেগুলো বাড়িতে নুদা তৈরী, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার অথবা বিক্রি করা যায়। এগুলির চাহিদা ও দাম ভাল রয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর মৌসুমের শুরুতে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। অনেক কৃষক সঠিক সময়ে বীজ বপণ করতে পারায় গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ শত ৭০ হেক্টরের বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। তবে বাজারে পাটের দাম ভালো হওয়ায় এতে করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। আগামী বছর এ অঞ্চলে আরও বেশী পরিমান জমিতে পাট চাষ হবে ইনশাল্লাহ।
নদী বন্দর / বিএফ