এবারের বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ২১০০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান। এতে বিপুল ক্ষতির আশঙ্কায় আছেন কৃষকরা। পাশাপাশি পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ। পানি বাড়তে থাকায় ডুবে আছে রাস্তাঘাট। চলাচলের জন্য নৌকা ছাড়া আর বিকল্প কোনো বাহন নেই।
পানি বাড়তে থাকায় বারুহাসের কুসুম্বী, বিনসাড়া, সগুনা ইউনিয়নের পতিরামপুর, ধাপ তেঁতুলিয়া, সান্দুরিয়া, ভেটুয়া, কুন্দইল, কুশাবাড়ি, মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের হামকুড়িয়া, তরণীপুর, আমবাড়িয়া, শ্যামপুরসহ প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সবগুলো সড়ক ডুবে যাওয়ায় নৌকায় চড়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের। দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাবারের সংকট। গ্রামের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় অনেক কৃষক তাদের বোরো ধান নৌকা ছাড়া হাটবাজারে নিতে পারছেন না।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া বিনোদ, সগুনা ও বারুহাস, তাড়াশ, দেশীগ্রাম, নওগাঁ ও মাধাইনগর ইউনিয়নের উঁচু জমিতে এবার প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহের টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানি বাড়ায় প্লাবিত হয়েছে চারটি ইউনিয়নে ২১০০ হেক্টর জমির ধান। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
উপজেলার পৌর এলাকার ভাদাস এলাকার কৃষক আরিফুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে রোপা আমন ধান তলিয়ে গিয়েছে। এখন দ্রুত পানি সরে না গেলে কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
উপজেলার সেরাজপুর গ্রামের কৃষক ফজলু মুন্সি জানান, ভাদ্র মাসের শুরুতে তাড়াশ উপজেলায় ১২-১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বন্যার পানি বৃদ্ধি, ভারি বর্ষণ ও বিভিন্ন গ্রামের ফসলি মাঠে অবৈধভাবে পুকুর খননের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে কৃষকের স্বপ্নের সবুজ ধান। আরও কিছুদিন এভাবে চললে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য হবে বলেও জানান তিনি।
বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামের মঞ্জু মিয়া, আসিরুল ইসলাম, সোবাহান হোসেনসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পানি বাড়ায় বেশিরভাগ কৃষকের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। পানি নেমে গেলেও আবারও আমন রোপণ করতে গেলে বীজ সংকট দেখা দেবে। তাছাড়া প্রতি বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করতে সার, কীটনাশক, চারা ও শ্রমিক বাবদ প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন কৃষকরা। বন্যার পানি নেমে গেলে আবারও ধান রোপণ করতে কৃষকদের বাড়তি গুনতে হবে অন্তত ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এই সামর্থ্য অনেক কৃষকের না থাকায় দুঃশ্চিন্তায় আছেন তারা।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা বলেন, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের নিচু জমিগুলো সামান্য বৃষ্টি বা পানিতে তলিয়ে যায়। আর উঁচু জমিতে লাগানো ধানও এ বছর ডুবে গেছে। আশা করছি পানি দ্রুত নেমে গেলে কৃষকরা আবারও এসব জমিতে আমনের আবাদ করতে পারবেন।
নদী বন্দর / এমকে