1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
ফল বাগান থেকে ১৩ লাখ টাকা বিক্রির আশা দেলোয়ারের - Nadibandar.com
সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪১ অপরাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১৩৭ বার পঠিত

মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার বাঁশতৈল ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। স্নাতক পাসের পর তিনি বন্ধুদের সাথে ঢাকায় বায়িং হাউসে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি গড়ে তোলেন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। ২০১৫ সালে দুই ব্যবসায় তাকে লোকসানের মুখে হয়।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে ফলের বাগান দেখে তিনি ফল চাষে আগ্রহী হন। পরে গ্রামের বাড়ি ফিরে নিজেদের জমিতে পেয়ারা গাছ লাগিয়ে ফলের বাগান শুরু করেন। তারপর আর তার পেছনে ফিরতে হয়নি। বর্তমানে মাল্টা চাষে পেয়েছেন সাফল্য। স্বপ্ন এখন তার হাতের মুঠোয়। নিরন্তর চেষ্টা, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে আরও বড় সাফল্যের পেছনে ছুটে চলেছেন তরুণ উদ্যোক্তা দেলোয়ার।

২০১৫ সালে ১০০ পেয়ারা গাছের চারা দিয়ে ফলের বাগান শুরু করেন দেলোয়ার। ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাগানে প্রথম ৮৫টি মাল্টাগাছ লাগান। বর্তমানে তার বাগানে ১ হাজার ১০০টি গাছে মাল্টা ধরেছে।

চলতি মৌসুমে শুধু মাল্টাই সাত লাখ টাকায় বিক্রি করার আশা করছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সাত লাখ টাকায় মাল্টা বিক্রি হলে সব খরচ বাদে লাভ থাকবে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাগানের অন্যান্য ফল বিক্রি করেও বেশ মুনাফা পাবে। আগামী বছর উৎপাদন খরচ কমে যাবে, কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে তখন আরও বেশি লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে তিনি জানান।

দেলোয়ার পর্যায়ক্রমে বাগানের জমির আয়তন ও বিভিন্ন ধরনের ফলগাছের সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে প্রায় ৬০০ শতাংশ জমিতে ৪ হাজার পেয়ারা, ১১০০ মাল্টা, ৬০০ লেবু, ৩০০ কলা, ৩৫০ পেঁপে, বারোমাসি ২৬০ আম, দার্জিলিংয়ের কমলা ৮৫, চায়না কমলা ৬৪, বারোমাসি আমড়া ৪০, লটকন ৩০, কতবেল ২৫, জাম্বুরা ২০, কাশ্মিরিকুল ও বনসুন্দুরী ১৪০টি, ডালিম ৮, চেরি ফল ৬, বাউকুল ও আপেলকুল বরই ও রামবুটানগাছ ৪টি। এসব গাছে বেশ ফলও ধরেছে। এরই মধ্যে তিনি পেয়ারা, বারোমাসি আমড়া, আম ও পেঁপে বিক্রি শুরু করেছেন।

পাঁচগাঁও গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটি গাছেই সবুজ রঙের মাল্টা ঝুলছে। মাল্টাগুলো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে কিনে নিচ্ছেন ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া আকার ভেদে প্রতি পিস পেঁপে ৩০ থেকে ৭০ টাকা, প্রতি মণ পেয়ারা ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ আমড়া বিক্রি হচ্ছে।

বাগানে যাতায়াতে সুবিধার জন্য দেলোয়ার নিজ উদ্যোগে ইটের খোয়া, পাথরকুচি ও পিচ দিয়ে কোনোমতে কার্পেটিং করলেও তা অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে গেছে।

পেয়ারা চাষে দেলোয়ার হোসেন ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। তবে মাল্টা চাষে ব্যাগিং পদ্ধতির দরকার হয় না বলে জানালেন তিনি। জৈব সার, রাসায়নিক সার, দানাদার বিষ ও কীটনাশকের মাধ্যমে ঠিকমতো যত্ন নিলেই মাল্টার ফলন হয়। তিনি নাটোর থেকে মাল্টার চারা সংগ্রহ করেছেন। নাটোর ছাড়াও অন্য সব গাছের চারা এনেছেন দিনাজপুর ও ঝিনাইদহ থেকে। তিনি ৭৫ থেকে ২৫০ টাকা দরে প্রতিটি মাল্টার চারা কিনেছেন। তার বাগানে বর্তমানে নিয়মিত চারজন শ্রমিক কাজ করছেন। অনিয়মিত আরও বেশ কয়েকজন শ্রমিককে কাজে লাগান। দেলোয়ারের উদ্যোগ দেখে স্থানীয় কৃষি বিভাগও তাকে সহায়তা করছে।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পেয়ারা দিয়ে বাগান শুরু করলেও পরে মাল্টার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। আমি মাটির গুণাগুণ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। তবে আমাদের এই মাটি যথেষ্ট উপযুক্ত। ফল খুবই মিষ্টি। বাজারে বর্তমানে বারি–১ জাতের মাল্টা বিক্রি করছি।

সবুজ মাল্টা মিষ্টি হবে কিনা, তা নিয়ে মানুষের সংশয় আছে। তবে লোকজন এসে মাল্টা খেয়ে কিনে নিচ্ছেন।’ আগাছা পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বাগানের খরচ কমে আসে। পানি দিতে তিনি পাইপ ব্যবহার করেন। যন্ত্রের সাহায্যে তিনি নিড়ানির কাজ করছেন।

যে জায়গায় দেলোয়ার বাগান করেছেন, সেখানে আগে গরু-ছাগল চরানো হতো বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা মফিজ উদ্দিন, হালিম মিয়া, ফরহাদ মিয়াসহ অনেকেই।

তারা বলেন, এখন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে ফল কিনছেন। এতে দেলোয়ারও স্বাবলম্বী হয়েছেন, অন্য লোকও বাগানে কাজ করে জীবীকানির্বাহ করছেন। সেই সঙ্গে বিষমুক্ত ফল পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর আমার আম বাগানের বিষমুক্ত ৭০ থেকে ৮০ মণ আম কালিয়াকৈরের বোর্ডঘর এলাকার স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালে কর্মরত ডাক্তার ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকতাদের কাছে বিক্রি করেছেন। প্রতি মণ আম ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।

তিনি বলেন, বারোমাসী আম গাছে আগামী তিন মাসের মধ্যে আম আসবে। আমগুলো ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা মণে বিক্রি করার আশা আছে বলে তিনি জানান।

বাগানে পেয়ারা নিতে আসা গোড়াই এলাকার রাইজ উদিন বলেন, অনেক আগে থেকেই তিনি এই বাগান থেকে তিনি পেয়ারা নিয়ে থাকেন। এখন মাল্টাও নিচ্ছেন। সবুজ মাল্টাগুলো খেতে ভারি মিষ্টি ও সুস্বাদু। হলুদ রঙের মাল্টার দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা দাম কম হওয়ায় সবুজ রঙের মাল্টায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

তিনি ২০১৯ সালে থাইল্যান্ড থেকে রাম্বুথানের চারা আনেন। ২০২০ সালে মালয়েশিয়া থেকে এবুকেটর চারা ও বীজ নিয়ে আসেন। এছাড়া তিনি সিঙ্গাপুর, চিন, ভিয়েতনাম, ভারত ও কম্বোডিয়ায় ভ্রমণ করেছেন। ওইসব দেশে ফলের বাগান দেখে তিনি এই ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন বলে জানান।

দেলোয়ার হোসেন জানান, এ পর্যন্ত চারা সংগ্রহে তার প্রায় ৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাগানের নিরাপত্তা বেষ্টনিতে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

বাণিজ্যিকভাবে বেদানা বিক্রি শুরু হয়নি। তিনি ৪ লাখ টাকার পেয়ারা, ৭০ হাজার টাকার লেবু, ৬০ হাজার টাকার কলা ও ৬ হাজার টাকার আমড়া বিক্রি করেছেন। চলতি বছর ২ লাখ টাকার মাল্টা, ২ লাখ টাকার পেঁপে ও ৪ লাখ টাকার কাশ্মিরিকুল ও বনসুন্দরী ফল বিক্রি করবেন বলে তিনি জানান। প্রতি মাসে বাগান পরিচর্যা বাবদ ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।

দেলোয়ার হোসেনের বাবা গিয়াস উদ্দিন ও মা আলেয়া বেগম জানান, ছেলেটি ঢাকায় ব্যবসায় লোকসান দিয়ে গ্রামে ফলের বাগান করেছে। অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে। তারা দেলোয়ারের সফলতায় সরকারের সহযোগীতা কমনা করেন।

মির্জাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউর রহমান জানান, বারি–১ জাতের মাল্টা খুবই রসাল ও মিষ্টি। অপরিপক্ব অবস্থায় মাল্টা খাওয়া উচিত নয়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে দুই একর জমিতে প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাকে সার, চারা, ওষুধ, স্প্রে মেশিনসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

নদী বন্দর / সিএফ

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com