গ্রামীণ লোক সংস্কৃতির ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বুকে ধারণ করে বেলকুচি উপজেলার চাঁদ মিটুয়ানী গ্রামে সাদেকের বিলে সপ্তম বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। এই আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করেন প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের নেতা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। ২০টি বড় পানসি ও কোষা নৌকার এই প্রতিযোগিতা দেখতে মানুষের ঢল নামে।
আয়োজকেরা জানান, গত রোববার সকালেই শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, বেলকুচি, উল্লাপাড়া থেকে মিটুয়ানীতে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে সমবেত হয় উত্সাহী মানুষ। বেলা ৩টায় শুরু হয় প্রতিযোগিতা। ঘণ্টির ঝনঝনানি, ঢোল, বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে উদ্বুদ্ধকরণদাতাদের ‘জোরসে বল হেঁইয়ো, আরও জোরে হেঁইয়ো, বাইয়া যাও হেঁইয়ো’র ছন্দে ছন্দে মাঝিরা বৈঠা হাতে বেয়ে যায় নৌকা। তখন তীরবর্তী স্থানে সমান তালে ছুটে চলে সমর্থকেরা। দুই তীরে করতালি, হর্ষধ্বনি পরিশ্রান্ত মাঝিদের উত্সাহ যোগায়। সাঁতরে মাল্লাদের গায়ে পানি ছিটিয়েও উত্সাহে মাত্রা যোগায় স্থানীয়রা।
এনায়েতপুর থানার রূপনাই সাততারা, বেলকুচির লক্ষ্মীপুরের একতা এক্সপ্রেস, স্বাধীন বাংলা, সাতলাঠির ধুকুরিয়া এক্সপ্রেস, ভেন্নাগাছির সবুজ বাংলা, ধুকুরিয়া বেড়ার সোনার মদিনা, চর খাসিয়ার ফাইভ স্টার, উল্লাপাড়ার উড়ন্ত বলাকা, শাহজাদপুরের কাদাই বাদলার জনতা এক্সপ্রেস, নুকালীর করতোয়া এক্সপ্রেস জয়লাভ করে। এসব নৌকায় প্রায় অর্ধশত মাঝিমাল্লা নিয়ে প্রতিযোগী নৌকার সঙ্গে টান শুরু করলে তখনই বাঁধভাঙা মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। এদিকে এই বাইচকে ঘিরে প্রতিযোগিতাস্থল জুড়ে বসেছিল মুখরোচক খাবারের দোকানের মেলা। সেখানেও ছিল নারী-পুরুষ বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড়। বাইচ উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে নাইয়র আনা হয়েছিল ঝি-বেটিসহ স্বজনদের। এ যেন ঈদের মতোই আরেক আনন্দ। এই আনন্দ ৮-১০টি গ্রামের মানুষ তিন দিন উপভোগ করেছে। প্রতি বাড়িতেই করা হয়েছে তালের পিঠার আয়োজন।
স্থানীয় সমাজসেবক গোলাম আম্বিয়া মাস্টারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ মাসুদ রানা, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিজয়ীদের ফ্রিজ ও অংশগ্রহণকারীদের টিভি উপহার দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, ‘ভবিষ্যতেও বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস, জঙ্গিমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে সবাইকে উত্সাহ জোগাতে এই আয়োজন অব্যাহত রাখব।’
নদী বন্দর / পিকে