1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
তিস্তায় বিলীন শত শত বসতভিটা-স্থাপনা, দুর্ভোগে ভাঙনকবলিতরা - Nadibandar.com
বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৯ অপরাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১৫৯ বার পঠিত

দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে তিস্তার ভাঙন। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ ও ছিনাই ইউনিয়নের শত শত পরিবারের বসতভিটা। বাদ যায়নি ভিটেমাটি, ফসলিজমি, স্কুল, মসজিদ, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়কসহ স্পার। সব হারিয়ে দিশেহারা এসব এলাকার মানুষজন। রাজাহাটের ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।

জানা যায়, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ভেঙেই চলেছে তিস্তা নদী। রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাব খাঁ মৌজা, গতিয়াসাম মৌজা, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি ও তৈয়ব খা এলাকা, ছিনাই ইউনিয়নের কিং ছিনাই, কালুয়া, জয়কুমর, ছিনাইহাটসহ পূর্ব দেবোত্তর এলাকার শত শত পরিবারের বাড়িঘরসহ বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে তলিয়ে গেছে চারটি মসজিদ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি সেতু, পাঁচটি কালভার্ট, বাঁধ, এক কিলোমিটার পাকা সড়কসহ দুটি স্পার।

 

এসব এলাকা ঘুরে জানা যায়, নদীভাঙনে তিস্তার পেটে গেছে অন্তত একশ বিঘা জমির রোপা আমনের ক্ষেত। হুমকির মুখে রয়েছে তিন ইউনিয়নের তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কয়েকটি মসজিদ, একটি গুচ্ছগ্রাম, এক কিলোমিটার পাকা সড়কসহ শত শত পরিবারের বসতভিটা। ভাঙনের শিকার মানুষজন তাদের বাড়িঘরের টিনের চাল, টিনের বেড়াসহ পাকা ভবন ভেঙে সেগুলো রেখেছেন বিভিন্ন রাস্তার ধারে। অধিকাংশ পরিবার তাদের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে।

গতিয়াসাম মৌজার গৃহবধূ লিলি বেগমের অভিযোগ, ‘যখন তিস্তার ভাঙন আমাদের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে ছিল, তখন থেকেই অনেক সাংবাদিক এসেছে। তাদের অনেক কথা বলেছি, অনেক বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু কেউ গুরুত্বসহকারে বিষয়টি তুলে ধরেনি। এখন কথা না বলাটাই ভালো। এতো কথা বলে লাভ কী? আমরা আজও অসহায়, কালও অসহায়। আমাদের এখানে চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউ আসে নাই। পানি উন্নয়ন বোর্ডও কোনো উদ্যোগ নেয় না। এখন পর্যন্ত আমার দুই একর জমি নদীগর্ভে গেছে। বাড়িঘর ভেঙে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’

একই অভিযোগ করে গতিয়াসাম মৌজার কৃষক নজীব হোসেন (৭৫) বলেন, ‘গত কোরবানির ঈদের আগ থেকে তিস্তা নদী ভাঙছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বা কোনো জনপ্রতিনিধি এই নদীভাঙন এলাকায় আসলো না। কোনো জনপ্রতিনিধি এসে সহায়তা দেওয়া তো দূরের কথা সান্ত্বনাও দিলো না।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শ্রী রবীন্দ্রনাথ কর্মকার বলেন, ‘আমি একাধিকবার সরেজমিনে নদীভাঙনকবলিত এলাকাগুলো দেখতে গিয়েছি। নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে নগদ টাকা, শুকনো খাবারসহ অন্যান্য সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রেখেছি।’

তিস্তার ভাঙনে ভিটেমাটি হারানো খিতাব খাঁ মৌজার গৃহবধূ আঞ্জুয়ারা (৪৫) বলেন, ‘এখানে আমাদের তিন রুমের পাকা বাড়ি ছিল। বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে বোনের বাড়িতে রেখেছি। আমাদের আশ্রয় নেওয়ার কোনো স্থান নেই। ঋণের টাকায় ১২ শতক জায়গা কিনেছিলাম। এখনো রেজিস্ট্রি করিনি। কোনোকিছু চাষও করলাম না। তার মাঝেই তিস্তার ভাঙনে সম্পূর্ণ জমি নদীতে চলে গেল।’

 

একই পরিস্থিতির শিকার রামহরি এলাকার গৃহবধূ আসমা বেগম (৫০) বলেন, ‘এখানেই আমার পাকাবাড়ি ছিল। নদীভাঙনের শিকার হওয়ায় সে বাড়ি ভেঙে ইটসহ অন্যান্য জিনিসপত্র আত্মীয়ের বাড়িতে রেখেছি। আপাতত এখানে রান্নাঘরটা আছে সেটাতে ছেলের বউ ও ছেলে থাকে। আমি অন্যের বাড়িতে গিয়ে থাকি। আমাদের মোট জমির মধ্যে অবশিষ্ট আছে আনুমানিক বিশ শতক। নদীর ভাঙনে চলে গেছে আনুমানিক ত্রিশ শতক জমি।’

অন্যদিকে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা মানুষজন ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, শুধু গতিয়াশাম এলাকায় কয়েকদিনে প্রায় দুই হাজারের বেশি ঘর নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনদুর্গতদের পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা দেওয়ার জরুরি। মহাপরিকল্পনার নামে অথবা ভিন্ন নামে হলেও অন্য দেশের ঋণের ওপর নির্ভর না করে দেশীয় অর্থায়নে তিস্তা নদীর সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে জানান তিনি।

 

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তিস্তা নদীর ভাঙনরোধ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য প্রায় ৮২০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়ন হলেও তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধান হবে। বর্তমানে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব দিয়ে তিস্তার ভাঙনরোধের চেষ্টা চলছে।

রাজারহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজিবুল করিম জানান, এরই মধ্যে খিতাব খা মৌজার নদীভাঙনের শিকার ৩৫০টি পরিবারকে শুকনো খাবার ও দুই হাজার টাকা করে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। রামহরি ও তৈয়ব এলাকার ২৩টি পরিবারকে তিন হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কিং ছিনাই, কালুয়া, জয়কুমর, ছিনাইহাটসহ পূর্ব দেবোত্তর এলাকার নদীভাঙনের শিকার ১২২টি পরিবারকে শুকনো খাবার সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

নদী বন্দর / বিএফ

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com