পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কৃষক মো. সুজন হাওলাদার। তিন বছর আগে ইউটিউবে ভিডিও দেখে মুক্তাচাষে আগ্রহ জাগে তার। এরপর লালমনিরহাটের লিটন নামের এক চাষির সহযোগিতা নেন। পরীক্ষামূলক বাড়ির পুকুরে ৭৫০টি ঝিনুক দিয়ে এ চাষ শুরু করেন।
প্রথম ১০ মাসেই সফলতার মুখ দেখেন সুজন। তার সফলতা দেখে এখন মুক্তাচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন উপজেলার অনেকই। এরই মধ্যে ১৫৩ জনকে চাষের পদ্ধতিও শিখিয়েছেন তিনি।
সুজন উপজেলার ধুলাশ্বার ইউনিয়নের চাপলি বাজার এলাকার বাসিন্দা। নিজের বাড়ির ৩০ শতক পুকুরেই চাষ করছেন মুক্তার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো পুকুরে ভাসমান অবস্থায় টানানো হয়েছে রশি। এতে বেঁধে রাখা হয়েছে নেটের ব্যাগ। এর ভেতরেই দেখা যায় ঝিনুক।
মুক্তা চাষি সুজন জানান, ইউটিউব দেখে ২০১৯ সালে তিনি মুক্তা চাষ করেন। ১০ মাসেই তিনি সফলতার মুখ দেখেন। প্রথমবার ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ১ লাখ টাকা বিক্রি করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ২ লাখ টাকা বিক্রি করেন। বর্তমানে এ চাষ বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এতে তিনি বছর শেষে মপক্ষে ১০ লাখ টাকা বিক্রির আশা করেছেন। প্রতিটি ঝিনুকে তার ৩০ টাকা করে খরচ হয়।
সুজন বলেন, ঝিনুকের খাবারের জন্য বেশি কিছু দিতে হয় না, মাঝে মাঝে কাঁচা গোবর ও পানি পরিষ্কার করার জন্য ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। আমি এখন পর্যন্ত ১৫৩ জনকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি শিখিয়েছি। এ চাষ বেশ লাভজনক। এছাড়া একটি পুকুরে একসঙ্গে মাছ ও ঝিনুক চাষ করা যায় এটা সবচেয়ে ভালো একটি দিক।
চাষ পদ্ধতি:
ঝিনুক সংগ্রহ করে তার খোলসের ভেতরের শিরা কেটে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মুক্তা তৈরির জন্য সেটিং করা হয়। একটি ঝিনুকে দুটি মুক্তা জন্ম নেয়। ঝিনুকগুলো যাতে মাটিতে না মিলে যেতে পারে সে জন্য একটি নেটের ব্যাগে করে পানিতে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। এসব ব্যাগ যাতে সব সময়ই পানিতে থাকতে পারে সেজন্য পুকুরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রশি বেঁধে ওই সব ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এজন্য কিছু ফুলুট ওই রশির মাঝে মাঝে বেঁধে দিতে হবে।
এভাবে ঝিনুক রেখে ব্যাগগুলো ঝুলিয়ে রাখলে মুক্তা তৈরি হয়। আট-দশ মাস পর প্রতিটি ঝিনুক থেকে পরিপূর্ণ মুক্তা পাওয়া যায়। মুক্তার দুটি ধরন রয়েছে। এর একটি নিউক্লিয়ার ডাইস ও অন্যটি মেন্টাল টিস্যু। তবে মেন্টাল টিস্যু থেকে নিউক্লিয়ার ডাইসের মুক্তার চাহিদা বেশি।
সুজনের প্রতিবেশী ফখরুল বলেন, আমরা প্রথমে ওরে নিষেধ করলেও পরবর্তীতে দেখলাম এই মুক্তা চাষ করেই সে সফল। এখন আমরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছি এই চাষে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, কলাপাড়া উপজেলায় ধুলাশ্বারের সুজন নামে এক চাষি অনেক আগ থেকে সফলতার সঙ্গে মুক্তা চাষ করে আসছে। আমরা তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি। পরবর্তীতে সরকারি বড় কোনো সহযোগিতা পেলে তাকে দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাকে দেখে এখন উপজেলার অনেকেই এই পেশায় আসছে। নবীন যারা আছে তাদের এই চাষে সফলতা পেতে তার কাছ থেকে প্রাথমিক ধারণাটা নিতে বলি।
এ মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা চাচ্ছি সরকারিভাবে এই উপজেলায় মুক্তা চাষের প্রকল্প নিয়ে আসতে। যাতে সফলতার সঙ্গে কৃষকরা ঝিনুক চাষ করতে পারে। তাদের আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করবো।
নদী বন্দর / সিএফ