সরকারের পতন ঘটানোর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ‘বাঁশের লাঠি নিয়ে নামার’ প্রস্তুতি নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
দলের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আমরা ভয় পাই বলে সরকার এতো শক্তিশালী। সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যদি বলি- ‘এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি’- তাহলে দেখবেন জবাব দেওয়ারও সময় পাবে না। গণতন্ত্র উদ্ধারের দায়িত্ব আমাদেরই। এবার বাঁশের লাঠি নিয়ে নামতে হবে।
সোমবার (৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খা হলে জিয়ামঞ্চের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি বলেছিলেন- আমরা দেশে আইনের শাসন নয়, শেখ মুজিবের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বর্তমানেও দেশে আইনের শাসন নয়, শেখ হাসিনার শাসন চলছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, প্রশাসনের জবাবদিহিতা নেই সরকারের কাছে। আর সরকারের জবাবদিহিতা নেই জনগণের কাছে। সরকার ও রাষ্ট্র দুটি যে আলাদা তা তারা বুঝতে চায় না। বিচার বিভাগকেও তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয় না। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকেও কলুষিত করেছে। বিচারপতি সিনহাকে (সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে) কোন প্রক্রিয়ায় বের করা হয়েছে, দেখেছি। আমার কাছে প্রমাণ নেই, তবে শুনেছি তাকে নাকি শারীরিকভাবেও আঘাত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিচার চলাকালীন অমুকের এত বছর জেল হবে, ফাঁসি হবে- এখন আগেভাগেই এমন মন্তব্য শোনা যায়। এসব কারণে আজ ন্যায়বিচার থেকে মানুষ বঞ্চিত৷ পুলিশ, আদালত, সরকার একসঙ্গে জনগণের ওপর নিষ্পেষণ চালাচ্ছে৷ এটা তো কোনো উপনিবেশ না। স্বাধীন দেশে কেন জনগণের ওপর এমন নির্যাতন হবে?’
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রসঙ্গ এনে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, এখন একতরফা লেখা হচ্ছে। মিডিয়া স্বাধীন নয়, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে পারে না।
গণমাধ্যমগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তাদের (সরকার) বিরুদ্ধে লিখতে পারেন না ভালো কথা, কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে নানা গল্প তৈরি করে লেখা বাদ দেন। রাজনৈতিক আলোচনায় কাজ করতে সহযোগিতা করেন। সাংবাদিকেরা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে। স্বাধীনভাবে লিখতে না পারেন, কিন্তু গণতন্ত্র আন্দোলনের সমর্থন না দিয়ে তাদের নিয়েই লেখা স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন দেওয়ার শামিল।
তিনি আরও বলেন, চোর ধরার জন্য যে পুলিশ বাহিনী সেই বাহিনীই যদি চুরি করে, তবে কার কাছে বিচার চাইবেন? শেখ হাসিনাকে অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় রেখেছেন তারাই তো পরিমনির খরিদ্দার। কেন তাকে তিনবার রিমান্ডে নেওয়া হলো? বিচার বিভাগ চেয়ারে বসে মজা করে।
গয়েশ্বর আরও বলেন, আদালতে ইতিহাস নির্ধারণ হয় না, ইতিহাস নির্মাণ করে জনগণ। আদালতের রায়ে দেশ স্বাধীন হয়নি। কোনটা ইতিহাস সেটা বলা আদালতের দায়িত্ব না। দেশ স্বাধীন করেছে দেশের মানুষ।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও জিয়ামঞ্চের সভাপতি আব্দুস সালাম, মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়েজ উল্যাহ ইকবাল ও সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম প্রমুখ।
নদী বন্দর / বিএফ