সুনামগঞ্জে গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে তিনদফা বন্যা হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার বিভিন্ন এলাকার সড়ক, সেতু ও কালভার্ট। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কের নোয়াগাঁও এলাকায় সড়কের বেশকিছু অংশ ও একটি সেতু ভেঙে যায়। এরপর থেকে ওই সড়ক দিয়ে দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলায় বন্ধ হয়ে যায় সরাসরি যান চলাচল। গত দেড় বছরেও সংস্কার হয়নি এই সড়কের। এতে জেলা সদরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষকে।
সুনামগঞ্জে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুন মাসের শেষ দিকে বন্যায় সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কের দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও এলাকায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে প্রায় ৫০০ মিটার পাকা সড়ক ভেঙে পাশের খাদে বিলীন হয়ে যায়। একই সঙ্গে সেখানে থাকা একটি সেতু ধসে পড়ে। এরপর থেকে স্থানীয়দের নির্মাণ করা দুটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে ও খেয়া নৌকায় করে মোটরসাইকেলে পার হচ্ছেন মানুষজন। এতে ভোগান্তি যেমন হচ্ছে তেমনি খরচও হচ্ছে বেশি।
জানা যায়, গত বছর এখানে খেয়া নৌকায় পারাপার হতে গিয়ে প্রবল স্রোতের ধাক্কায় নৌকা থেকে ছিটকে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সুরমা নদীর প্রবল স্রোত সরাসরি এখানে এসে আঘাত হানে।
নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা জানান, দোয়ারাবাজার উপজেলার মানুষজনের জেলা সদরে যাতায়াতের এটিই মূল সড়ক। আবার এই সড়ক দিয়ে জেলার ছাতক উপজেলার মানুষও সহজে জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারেন। অনেক চাকরিজীবী প্রতিদিন এই সড়ক হয়েই দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলায় যাতায়াত করেন। কিন্তু সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় গাড়ি থেকে নেমে কখনো পায়ে হেঁটে সাঁকো পার হয়ে আবার কখনো খেয়া নৌকায় পার হতে হচ্ছে সড়কের ভাঙা অংশ।
স্থানীয়গ্রামের বাসিন্দ মো. আব্দুর রহমান জানান, এই সড়ক যে স্থানে ভেঙেছে তার দক্ষিণ পাশে গভীর খাদ থাকায় সেখানে আর সড়ক নির্মাণ করা যাবে না। একইভাবে ভাঙা সেতুর জায়গাতেও নতুন করে সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। ১০ বছর আগে যখন সড়কের কাজ ও সেতু নিমাণ করা হয় তখনই এলাকাবাসী বলেছিলেন এখানে সড়ক টিকবে না। কিন্তু এলাকাবাসীর কথা তখন কেউ শোনেনি বলে জানান তিনি।
একই গ্রামের মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘এলজিইডি ইচ্ছে করলে ভাঙা সড়কের পাশে এই এক বছরে একটি বিকল্প সড়ক নির্মাণ করতে পারতো। এলাকাবাসী বিভিন্নভাবে যোগাযোগও করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’
মান্নারগাও গ্রামের বাসিন্দা শামসু উদ্দিন বলেন, ‘আগে আমার গ্রাম থেকে ছাতক যেতে হলে আধা ঘণ্টা লাগতো। কিন্তু সেতু ও রাস্তা ভাঙার পর থেকে ছাতক যেতে প্রায় দুইঘণ্টা সময় লাগে। এই দুর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি পাবো?’
হাজারী গাও গ্রামের বাসিন্দা ওমর হাসান বলেন, ‘পরিবারের সবাইকে নিয়ে ছাতক বেড়াতে যাচ্ছি। তবে সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো গত দেড় বছর ধরে ছাতক-সুনামগঞ্জ রাস্তার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এটার দিকে কেউ নজর দেয়না। মেয়েকে নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়েছি।’
দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু হেনা আজিজ জানান, সড়কের যে স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেদিক দিয়ে সুরমা নদী থেকে ঢলের পানি হাওরে প্রবেশ করে। এখানে বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ বেশি থাকে। তাই সড়কের ভাঙা অংশে কাজ করে কোনো লাভ হবে না। এখন ওই স্থান পরিবর্তন করে সড়ক অন্যদিকে নির্মাণ করতে হবে। না হলে বন্যার সময় পাহাড়ি ঢলের তোড়ে সড়ক আবার ভাঙবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এটি জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়ক দিয়ে দুটি উপজেলার মানুষ জেলা সদরে যাতায়াত করেন। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল দ্রুত সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু দেড় বছর হয়ে গেছে, কোনো কাজ হয়নি।’
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম জানান, গত বছর কয়েকদফা বন্যায় সুনামগঞ্জে অনেকগুলো সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর সঙ্গে সেতু ও কালভার্টও ছিল। এর মধ্যে বেশকিছু সড়কে সংস্কার কাজ হয়েছে। সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কের ভাঙন সংস্কার ও সেখানে একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে আছে। তবে এই কাজের স্থান পরিবর্তন হবে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।
নদী বন্দর / এমকে