এক সময় জমির অন্যান্য ফসল ছিল ধৈঞ্চার চাষ। জমির প্রাণ ফেরাতে কৃষকরা নিয়মিত সবুজ (জৈব) সার হিসাবে ব্যবহার করতেন ধৈঞ্চা। কিন্তু কালের বিবর্তনে জমিতে হাইব্রিড ফসল আর রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় প্রায় উঠেই যাচ্ছে ধৈঞ্চার চাষ।
এর ফলে ক্রমশ মাটি হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক প্রাণশক্তি। এভাবে চলতে থাকলে মাটি হারিয়ে ফেলবে তার স্বাভাবিক উর্বরা শক্তি। বাড়বে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। সে সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে চাষবাসের খরচ!
ধৈঞ্চার চাষের অতিতের স্মৃতি হাতড়ে কয়রা সদরের ৬ নং কয়রার প্রান্তিক কৃষক মোস্তফা শেখের ভাষায়, আগের আমলের বাপ-দাদারা প্রতি বছর একবার ধৈঞ্চার চাষ করতেন। মোটামোটি একমাসের মধ্যেই সবুজ চারায় ছেয়ে যেত ফসলের মাঠ। কী সুন্দর ছিল নরম ও সবুজ ধৈঞ্চার ক্ষেত।
তিনি আরো বলেন, জমি থেকে ধৈঞ্চা কেটে পুরো জমিতেই ছিটিয়ে লাঙল চালিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হতো। সপ্তাহের মধ্যেই জমিতে ধৈঞ্চা পচে মাটির সাথে মিশে যেত। মিটে যেত জৈব সারের চাহিদা। এরপর ওই জমিতে ফসল ফলতো সেসময় প্রচুর। কিন্তু এখন কি যে দিনকাল পড়লো; জমিতে সবুজ সার ও গোবর সারের পাউশ দেওয়া (ব্যবহার) বন্ধ হয়ে গেল।
কয়রা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনুতাপ সরকার বলেন, ধৈঞ্চার ব্যবহার এখন কমে গেলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রান্তিক এ অঞ্চলের কৃষকেরা ধৈঞ্চা চাষে অনিহা বাজারে বিনা পরিশ্রমে সার পায় এজন্য।
তিনি বলেন, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ধৈঞ্চারমতো প্রাকৃতিক সবুজ সারের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকদের নিয়মিত রাসায়নিক সার, বীজ ও কীটনাশকের ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে বুঝানো হচ্ছে।
গবেষণা করে দেখা গেছে, কৃষক পর্যায়ে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো গেলে মাটিতে ফসলের জন্য উপকারী পোকা মাকড়, কেঁচো প্রভৃতির বংশ বিস্তার হবে। এর ফলে জমিতে উৎপন্ন বিভিন্ন ফল ও ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে। আর কৃষকদের সাথে সাথে উপকৃত হবেন ভোক্তারাও।