তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ইসলামের মূল মর্মবাণী মানুষের মধ্যে ভাতৃত্ব স্থাপন করা। ইসলামের মূল মর্মবাণী যারা ধারণ করে তারা কখনো জঙ্গি হয় না। ইসলামের মূল মর্মবাণী যারা ধারণ করে তারা কখনো হানাহানিতে লিপ্ত হয় না। ইসলামের মূল মর্মবাণী যারা ধারণ করে তারা কখনো অন্য ধর্মের মানুষের ওপর আক্রমণ করে না।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ঈদে মিলাদুন্নবী ও শান্তি মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, রাসুল (সা.) সালাম কখনো অন্য কারোর ওপর আক্রমণ করার শিক্ষা দেয় নাই। আজকে ইসলামের মূল মর্মবাণী থেকে সরে গিয়ে অনেকে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দেয়, আমাদের তরুণদের বিপদগামী করে। অনেকে ওলি-আম্বিয়াদের বিরুদ্ধে কথা বলে। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমাদের বাংলাদেশে ওলি-আম্বিয়াদের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা মানুষকে বুঝিয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এনেছে।
বাংলাদেশের ধর্ম প্রচারের তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, যারা ইসলামের কথা বলে হানাহানিতে লিপ্ত হয় তারা ফেৎনা সৃষ্টিকারী। যারা ইসলামের কথা বলে অন্য ধর্মালম্বীদের ওপর আক্রমণ করে তারাও ফেৎনা সৃষ্টিকারী। আজকে আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ, ধর্মপ্রাণ নারী। তার পূর্বপুরুষ, বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ ইরাক থেকে এই দেশে ধর্ম প্রচার করার জন্য এসেছিলেন। যেইভাবে আনজুমানে রহমানিয়া মাইজভাণ্ডারী সাইফুদ্দীন আহমেদ আল হাসানী সাবের পূর্বপুরুষরা এই দেশে ধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন। বিভিন্ন অলি আম্বিয়ারা এই দেশে ধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা সঠিক নয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, এই দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের মাধ্যমে। আমাদের এই দেশ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই দেশের স্বাধীনতার জন্য মুসলমানের সঙ্গে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা লড়াই করেছেন। আমাদের এই দেশ সবার।
তিনি বলেন, এই দেশ যেমন মুসলমানের, তেমনি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবার। আমরা মিলেমিশে যুগ যুগ ধরে এ দেশে বসবাস করছি। আজকে যারা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে হামলা পরিচালনা করছে তারা ইসলামের মূল মর্মবাণী ধারণ করে না। তারা আসলে ইসলামের কথা বলে হামলা পরিচালনা করে আমাদের পবিত্র ধর্মকে কালিমালিপ্ত করছে। এদের বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
সমগ্র পৃথিবীতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নানা জায়গায় মুসলমানদের ওপর হামলা পরিচালনা হচ্ছে। ফিলিস্তিনে অধিকারের জন্য ঢিল ছুড়লে তাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়া হয়। তাই ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে হবে। আজকে আরব বিশ্ব এক থাকলে ইসরাইল এই সাহস পেতো না। আরব বিশ্বের ঐক্য মুসলিম উম্মাহর ঐক্য। মিয়ানমার থেকে ১২ লাখ মুসলমানকে যেভাবে বিতাড়িত করা হয়েছে, যেভাবে জবাই করা হয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, এরপর ওআইসি’র (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) অনেকদিন সময় লেগেছে একটি বৈঠক করতে। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য বড় লজ্জার বলে আমি মনে করি। পরে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে একটি বৈঠক হয়েছে এবং প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
‘তাই আমি বলবো, আসুন নবীজির (সা.) দেখানো পথে চলি। নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করি। ধর্মকে ব্যবহার না করার জন্য সবাইকে বিনিত অনুরোধ জানাবো। নিজেদের ঐক-সংহতির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের জন্য কাজ করতে হবে। মিয়ানমারের বিতাড়িত মুসলমানের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। পৃথিবীর অন্য জায়গায় যেখানে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করবো তাদের শান্তি কামনায়।’
পার্লামেন্ট অব ওয়ার্ল্ড সূফীজ প্রেসিডেন্ট হযরত শাহসূফী সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমেদ আল-হাসানীর সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সমাবেশে ভিডিওর মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।
নদী বন্দর / জিকে