জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে হঠাৎ গণপরিবহন ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে শুক্রবার ফিরে যাওয়ার সিডিউল থাকা প্রায় অর্ধলাখ পর্যটক আটকা পড়েছেন। তবে, শনিবার (৬ নভেম্বর) যাদের বিশেষ কাজ রয়েছে, তারা অনেকে অতিরিক্ত ভাড়ায় উড়োজাহাজে করে কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন। যাদের সেই সামর্থ্য নেই তারা ছোট যানবাহনে কক্সবাজার ছাড়ার চেষ্টা চালান সারাদিন। কিন্তু অন্যসময়ের চেয়ে ভাড়া দু’তিনগুণ হওয়ায় বিকেল পর্যন্ত কক্সবাজার ত্যাগ করতে পারেননি। এদের অনেকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও সৈকতের বালিয়াড়ি ও আশপাশে হেটে সময় ব্যয় করছিলেন। যোগাযোগ করছিলেন রাতে বাস ছাড়বে কিনা।
আগের মতো সপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে বৃহস্পতি-শুক্র ও শনিবার হাতে রেখে কক্সবাজার এসেছেন লাখো পর্যটক। এদের মধ্যে অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান বাৎসরিক অনুষ্ঠানের আগের নির্ধারিত সময়ানুসারে কক্সবাজার এসেছেন বৃহস্পতিবার। আবার শুক্রবার ভোরেও পৌঁছান অনেকে। যারা শুক্রবার ফিরে যাওয়ার সিডিউলে ছিলেন তারা এসেছিলেন আরও কয়েকদিন আগে। এ ধরনের পর্যটক অর্ধলাখ হবে বলে জানিয়েছে হোটেল সংশ্লিষ্টরা।
বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তারা নির্ধারিত সময়ে কক্সবাজার ছেড়ে যেতে পারেননি। তবে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলামের মতে, পর্যটক আটকা পড়ার বিষয়টি প্রশাসনকে কেউ জানায়নি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
আবার পূর্ব থেকে হোটেল রুম বুকিং দিয়ে যাদের শুক্রবার বিকেলে পৌঁছানোর কথা ছিলো, কিন্তু যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কক্সবাজারে ভ্রমণে আসতে পারেননি প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক। প্রায় অর্ধলাখ পর্যটক শুক্রবার-শনিবারের জন্য হোটেলের কক্ষ অগ্রিম বুকিং দিয়েছিলেন। কিন্তু রাতের বাস ও নিজস্ব গাড়িতে যাত্রা করা ২০ হাজারের মতো পর্যটক শুক্রবার ভোরে কক্সবাজার পৌঁঁছালেও ভোরে যাত্রা করার কথা ভাবা অন্য পর্যটকরা শেষমেষ আসতে পারেননি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় শুক্রবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য গণপরিবহন, পণ্যবাহী ট্রাক ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় পরিবহন সংগঠনের নেতারা। হঠাৎ যান চলাচল বন্ধের ঘোষণায় সাধারণ মানুষকে পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। যার প্রভাব পড়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষুদ্র যানবাহন জেলা কেন্দ্রিক সড়ক বা চট্টগ্রামের পথে চলাচল করছে। তবে, সেসব যানবাহন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দিগুন টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
কক্সবাজারের রামুর জোয়ারিয়ানা এলাকার বাসিন্দা মুবিনুল হক বলেন, জরুরি কাজে শুক্রবার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু হঠাৎ গণপরিবহন ও দূরপাল্লার বাস বন্ধ হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছি। এরপরও বাড়ি যাওয়ার জন্য একটি মাইক্রোবাস পেলে ২০০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা দাবি করে। তাও সরাসরি না গিয়ে লোকালে যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছে চালক। ফলে বাড়ির জরুরি প্রোগ্রামে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তার মতো অনেকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম, ফেনী, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, টেকনাফ যেতে পারেননি।
ফেনীর বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আমিরুল ইসলাম স্ত্রীকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছেন মঙ্গলবার। বেরাবার প্রবাসে ফিরে যাবেন বলে শুক্রবার সকালের বাসে কক্সবাজার ত্যাগ করার কথা ছিলো। কিন্তু সকালে হোটেল ছাড়লেও বাসে কক্সবাজার ত্যাগ করতে পারেননি।
কক্সবাজার তাজ করপোরেশন অ্যান্ড ট্রাভেলস সেন্টারের মালিক জানে-আলম বলেন, অনেকে নগদে টিকিট করলেও, অনেকে আবার চাহিদার সঙ্গে দামের সামঞ্জস্য না হওয়ায় টিকিট কাটেননি।
সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় সিলেট থেকে আসা নবদম্পতি নোমান ও নাবিলা শরিফের সঙ্গে। সকালে চট্টগ্রাম গিয়ে ট্রেনে সিলেটে ফেরার কথা ছিলো তাদের। কিন্তু স্বপ্নের কক্সবাজারে হানিমুনটা শেষ বেলায় এসে বেদনায় ভরে দিয়েছে পরিবহন ধর্মঘট।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, হঠাৎ দূরপাল্লার বাস বন্ধ হওয়াতে পর্যটকরা চরম বেকাদায় পড়েছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও।
তিনি বলেন, বাড়ি ফেরার আশায় আনুমানিক ৩০ থেকে ৫০ হাজার পর্যটক হোটেল ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে যদি বাস খুলে দেওয়া না হয় তাহলে এসব পর্যটকরা চরম বেকায়দায় পড়বেন। একইভাবে বাস বন্ধ থাকায় বিপুল পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজারে আসতে পারেননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, নিয়মানুসারে শুক্রবার-শনিবার কক্সবাজারে পর্যটক আগমন বাড়তি থাকে। তাই শুক্রবারে ফেরার সিডিউলে ২০ হাজারের অধিক পর্যটক আটকে পড়ার বিষয়টি আমাদের অগোচরে রয়েছে। আর গণপরিবহন বন্ধের বিষয়টি জাতীয় ইস্যু। এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্ত আসার কথা। এরপরও শুক্রবার রাতের অবস্থা দেখে আটকাপড়া পর্যটকরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নদী বন্দর / জিকে