রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে আজিমপুরে যাওয়ার জন্য প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে সড়কে অপেক্ষা করছিলেন অধিভুক্ত সাত কলেজের ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী নাবিল বিন আহসান। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সিএনজিচালিত অটোরিকশার দেখা মিললেও ভাড়া চাওয়া হচ্ছে সাতশ টাকা। কিন্তু হাতে সময় কম, তাই কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়েই রওনা হতে হলো ওই পরীক্ষার্থীকে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শনিবারও (৬ নভেম্বর) সারাদেশে বেসরকারি বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটে চলা সাধারণ যাত্রীরা।
রাজধানীর প্রতিটি বাস স্টপেজে সরেজমিনে দেখা গেছে গাড়ির জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের ভিড়। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা।
সকালে রাজধানীর গাবতলী, মিরপুর, মহাখালী বাস টার্মিনাল, বিমানবন্দর, কুর্মিটোলা, বিশ্বরোড ও বাড্ডা এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
বাড্ডা এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে মিরপুর-২ যেতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন সালাহউদ্দিন নামের এক যাত্রী। তিনি জাগো নিউজকে জানান, প্রায় ৩০ মিনিট ধরে কোনো গাড়ির দেখা পাচ্ছি না। ধর্মঘট অমান্য করে যে কয়েকটি গাড়ি চলছে তাতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। ভাড়াও তিন-চারগুণ।
উত্তরা থেকে মতিঝিলে যাবেন আঞ্জুমারা অনু নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া চাচ্ছে ৬০০ টাকা। এখন বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যেতে হবে।
মেহেরপুর যেতে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে মিনিট্রাকে উঠেছেন ঢাকায় চাকরির পরীক্ষা দিতে আসা হামিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া বাসে আরাম করে গেলেও ভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। এখন মিনিট্রাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি ৪০০ টাকা ভাড়ায়।
অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং করা আহসান আলম জানিয়েছেন, গতকাল শুক্রবার থেকে অ্যাপস বন্ধ করে খেপে মোটরসাইকেল চালাচ্ছি। অ্যাপসে ভাড়া কম আসে এবং কোম্পানিকেও দেওয়া লাগে। চুক্তিভিত্তিক চালালে ভাড়া কিছুটা বেশি পাওয়া যায়।
বেসরকারি চাকরিজীবী সিরাজুল ইসলাম রানা। ভাড়া বেশি চাওয়ায় কোনো গাড়িতে না গিয়ে কয়েকজন মিলে ভ্যানে করে যাচ্ছেন শাহবাগে। তিনি বলেন, বারডেম হাসপাতালে চাকরি করি। বেশি দেরি হয়ে গেলে বেতন কাটা যাবে। তাই উপায় না দেখে কয়েকজন মিলে ভ্যান ভাড়া করে শাহবাগ যাচ্ছি।
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্টপেজগুলোতে এমনই অনেক যাত্রীর দেখা মিলেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যাত্রী সংখ্যাও। গণপরিবহন না থাকার সুযোগে রাজধানীর সড়কগুলোর অধিকাংশই এখন রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার দখলে।
জানা গেছে, বুধবার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে ডিজেল-কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে ভাড়া বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ পূর্বঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার সকাল থেকে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট।
তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে সারাদেশে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। বর্ধিত দাম না কমানো পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন।
নদী বন্দর / সিএফ