জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা ধর্মঘটে শুক্রবার থেকে বন্ধ ছিল বাস চলাচল। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। তবে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণার পর রোববার সন্ধ্যা থেকেই আবার শুরু হয়েছে বাস চলাচল। এতে করে সোমবার সকালে অফিসগামী-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। সব ধরনের পরিবহন চলাচল করায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়। আবার বাসের ভাড়া নিয়ে চালক-সহকারীর সঙ্গে যাত্রীদের বাগবিতণ্ডাও লক্ষ করা গেছে।
সোমবার (৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর পর বাসভাড়া বাড়ানোর দাবিতে গত শুক্রবার থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত চার দিনের অঘোষিত এই পরিবহন ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়ে দেশ। এতে ভোগন্তিতে পড়েন দেশের মানুষ। পথে পথে ছিল দুর্ভোগ। শিশু ও বয়স্কদের পড়তে হয় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়।
বিশেষ করে ছুটির দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা পড়েন আরও বিপাকে। আবার রোববার থেকে শুরু হওয়া অফিসগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় অনেক।
ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর সোমবার সকালে রামপুরা এলাকায় দেখা যায়, আগের মতো মানুষ বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। বাসে আসলে যে যার গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে যাত্রীর চাপ আগের চেয়ে বেশি লক্ষ করা গেছে। ওই এলাকায় কিছুটা যানজট দেখা গেছে।
রামপুরায় অপেক্ষারত চাকরিজীবী মশিউর রহমান বলেন, গতকাল ১৫০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে পল্টন যেতে হয়েছে। যেখানে বাসে ১০ টাকা লাগে। বাসের ভাড়া বেড়েছে, তারপরও বাস না থাকলে যে দুর্ভোগ হয় তা চরম।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাস না পেয়ে অফিসগামীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, যা প্রতিদিনের চিত্র। পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, লেগুনা চলাচল করলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। রোববার ধর্মঘটের সময় প্রচুর সংখ্যক বিআরটিসি বাস চললেও সোমবার সেসব বাসের খুব একটা দেখা মেলে না।
এদিকে মহানগরে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ টাকা ১৫ পয়সা। সে অনুযায়ী বিভিন্ন রুটে বাসের ভাড়া নির্ধারণ করেছেন বাস মালিকরা। তবে সামান্য কিছু বাসে নতুন ভাড়ার তালিকা রয়েছে। অধিকাংশ বাসে এ তালিকা না থাকায় ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা চলে যাত্রীদের। তালিকা ছাড়াই বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
তালিকার বিষয়ে ভিক্টর পরিবহনের চালক আব্দুল খালেক বলেন, কোম্পানি এখনো তালিকা দেয়নি। আজ/কালের মধ্যে তালিকা দিয়ে দেবে। তখন সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হবে।
বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে গণপরিবহনে নতুন করে ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন সমন্বিত ভাড়া অনুযায়ী, দূরপাল্লার বর্তমান বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি যাত্রীকে বাড়তি ৩৮ পয়সা গুনতে হবে। এছাড়া বড় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা, মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া মহানগরে বাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা, সেটা ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৪৫ পয়সা। মহানগরে মিনিবাসের বর্তমান ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা। সেটি বাড়িয়ে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারপ্রতি ৪৫ পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ আর মহানগরে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বাড়লো।
রোববার (৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে গণপরিবহনে ভাড়া পুনর্নির্ধারণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের বৈঠকে প্রস্তাবের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নদী বন্দর / বিএফ