জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় নতুন করে গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সিএনজিচালিত বাসগুলো আগের ভাড়াই চলবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বর্ধিতভাড়া নিয়ে রাজধানীতে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। এখন সব বাসই ডিজেলচালিত। যাত্রীদের থেকে আদায় করা হচ্ছে সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়ার চেয়েও বেশি।
যাত্রীদের অভিযোগ বাসচালক ও হেলপার ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন। তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে অনেক বাসে দিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এর আগে সিএনজিচালিত বাস থাকলেও এখন সবই ডিজেলচালিত বলা হচ্ছে। অনেকে বাড়তি ভাড়ার চার্ট টাঙিয়ে রাখলেও একটা বড় অংশ এখনও বর্ধিত ভাড়ার চার্ট টাঙায়নি গাড়িতে। অনেকে আবার চার্ট টাঙিয়ে পকেটে রেখে নিচ্ছেন বাড়তি ভাড়া।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, মৎস্যভবন, হাইকোর্ট, পল্টন, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, কমলাপুর এলাকা ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব এলাকায় কোনোধরনের চার্ট না টাঙিয়েই বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন বাসচালকের সহকারী। তবে, কয়েকটি বাসের হেলপার জানান, সকালে চার্ট হাতে পেয়েছেন। গাড়িতে নতুন ভাড়ার তালিকা বা চার্ট টাঙিয়ে রেখেছে এমন বাসের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটা।
এ নিয়ে কথা হয় আয়াত পরিবহনের একটি বাসের হেলপার (বাসচালকের সহকারী) নাসিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা কোম্পানির কাছ থেকে এখনও ভাড়ার চার্ট পায়নি। তবে আজ দেবে শুনেছি, হাতে পেলে গাড়িতে টাঙিয়ে রাখবো। তবে মালিকপক্ষের মৌখিক ‘ওয়েবিল’ শুনেছি, সে অনুযায়ী ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ২০ টাকার ভাড়া ৫টাকা বাড়িয়ে ২৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
চার্ট হাতে পেলেও এখনও গাড়িতে না টাঙিয়ে পকেটে রাখছে অনেক গাড়ি। এ নিয়ে নিউভিশন পরিবহনের চালক রবিন জাগো নিউজকে বলেন, সকালে গাড়ি বের করার সময় চার্ট পেয়েছি। তাই টাঙালো হয়নি।
অনেক গাড়িতে আগের ভাড়ার চার্ট শোভা পাচ্ছে। এ নিয়ে গাজীপুর পরিবহনের বাসচালক জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা সকালে নতুন ভাড়ার তালিকা হাতে পেয়েছি। এ অবস্থায় (রানিং) টাঙানো হয়নি। আগের চার্টের স্থানে নতুন চার্ট লাগানো হবে তাই সেটা এখনও ফেলেনি।
অন্যদিকে, বাড়তি ভাড়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে যাত্রী সাধারণদের মধ্যে। তারা বলছেন, কিছুদিন আগেও যেসব বাস সিএনজিচালিত ছিল, এখন সেগুলো ডিজেলচালিত বলে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।
এ নিয়ে সাধারণ যাত্রী এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত রশিদ আহমেদ বাবু বলেন, কিছুদিন আগেও সিএনজি স্টেশনে বাসের দীর্ঘ লাইন দেখা যেতো। আজ বাসের ভাড়া বাড়ায় সেগুলো ডিজেলচালিত হয়ে গেছে, করছে বাড়তি ভাড়া আদায়ও। এগুলো আমরা সাধারণ যাত্রীরা মনিটরিং করে কিছু করতে পারবো না। তবে সরকারের উচিত হবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।
আয়েশা খাতুন নামে অপর যাত্রী বলেন, সবাই (সরকার ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা) লাভবান হলেও ক্ষগ্রিস্ত হচ্ছি আমরা। ডিজেলের দাম ধীরে ধীরে সরকার বাড়াতে পারতো, তাহলে এমন নৈরাজ্য হতো না। সরকারের ভুলের খেসারত এখন জনগণকে দিতে হচ্ছে।
তবে, ডিজেলের গাড়ি সিএনজিতে চলে না বলে জানালেন ছয় নম্বর পরিবহনের চালক বাবুল আহমেদ। তিনি বলেন, যারা ডিজেলে চলে তারা বেশি ভাড়া দেবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা সিএনজিতে চলি তাই আগের ভাড়া আছে। তবে কিছু অসাধু থাকবেই যারা এ সুযোগে বেশি ভাড়া আদায় করবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান এ চালক।
নদী বন্দর / বিএফ