দেশে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। সেই সঙ্গে বেড়েছে গণপরিবহনের ভাড়া। তবে শুধুমাত্র ডিজেলচালিত বাসেই কার্যকর করা হবে নতুন এ ভাড়া। রোববার (৭ নভেম্বর) পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে এর উল্টো চিত্র।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন রুট ঘুরে দেখা গেছে, ডিজেলচালিত বাসের পাশাপাশি সিএনজিচালিত বাসগুলো ভাড়া বাড়িয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি। কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ২ টাকার বেশি পড়ছে। কোথাও কোথাও আবার তা ছাড়িয়েছে ৪ টাকা।
অথচ ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ভাড়া ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আন্তঃজেলা বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার।
দেখা গেছে, মিরপুর ১২ থেকে এয়ারপোর্টের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। এই রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে- পরিস্থান, বসুমতি ও প্রজাপতি পরিবহন। এরা যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছে ৪০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। এই রুটে আগে ভাড়া ছিল ৩০ টাকা।
মিরপুর ১২ থেকে যমুনা ফিউচার পার্কের দূরত্ব ৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার। নুরে মক্কা, অছিম পরিবহন এই রুটে ভাড়া নিচ্ছে ৩০ টাকা। বাসগুলো প্রতি কিলোমিটারে নিচ্ছে ৪ টাকা ৪৪ পয়সা। এই রুটে আগে ভাড়া ছিল ২৫ টাকা।
শিকড় বাসের যাত্রী মিরপুরের বাসিন্দা হাসনাত জানান, লোকাল বলেন আর সিটিং, যেখানে যাবেন একটা নির্দিষ্ট ভাড়া দিতে হচ্ছে। মিরপুর থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ৩৫ টাকা, আবার যাত্রাবাড়ীর ভাড়াও ৩৫ টাকা। ওয়েবিলের কথা বলে পকেট কাটছে বাস মালিকরা।
অপরদিকে মিরপুর ১২ থেকে গুলিস্তানের দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। এখানে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা। এতে করে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া পড়ছে ১ টাকা ৮৪ পয়সা। এই রুটে আগে ২৫ টাকা ভাড়া ছিল।
একইভাবে মিরপুর ১২ থেকে নিউমার্কেটের দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। এই রুটে ভাড়া ১০ টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ৩৬ টাকা। যা আগে ছিল ২৬ টাকা। এই রুটে প্রতি কিলোতে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২ টাকা ৭৬ পয়সা।
অপরদিকে বাড্ডা থেকে এফডিসির মোড় ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। যাতে কিলোপ্রতি ভাড়া পড়ছে ৩ টাকা ২২ পয়সা। আগে এই রুটে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা।
আগারগাঁও থেকে মহাখালী ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটারে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। যেখানে প্রতি কিলোতে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩ টাকা ৬৭ পয়সা। এই রুটে ভাড়া বেড়েছে ৫ টাকা।
শ্যামলী-কমলাপুরের দূরত্ব ৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এখানে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪৫ টাকা। প্রতি কিলোতে ৪ দশমিক ৭৮ পয়সা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
সাতরাস্তা থেকে গুলিস্তান ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। প্রতি কিলোতে ৪ টাকা ১৬ পয়সা নেওয়া হচ্ছে ভাড়া। আর খিলক্ষেত থেকে গুলিস্তান ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। অর্থাৎ এখানে কিলোপ্রতি ভাড়া পড়ছে ২ টাকা ৭৫ পয়সা।
অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে শিকড় বাসের হেল্পার নুর উদ্দিন বলেন, মালিক আমাদের যা ভাড়া নিতে বলছে আমরা তাই নিচ্ছি। চার্টে কী আছে জানা নেই।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, গণপরিবহনের একটি বিরাট অংশ সিএনজিচালিত। কিন্তু তারা বর্ধিত ভাড়া আদায় করছে। আর নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে সরকার। আমরা দেখেছি, দেশে গণপরিবহনসহ সব ক্ষেত্রের অনিয়ম রোধে বা নিয়ন্ত্রণে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা চটকদার বক্তৃতা ও বিবৃতির মধ্যেই থাকতে পছন্দ করেন।
তিনি আরও বলেন, ভাড়া বাড়িয়ে সরকার জনস্বার্থবিরোধী ভূমিকায় অবস্থান নিয়েছে। এটা কোনোভাবেই রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বা পেশাদারিত্বের পরিচয় না।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বর্ধিত বাসভাড়া কার্যকরের আগে কতগুলো বাস গ্যাসে চলে, আর কত বাস তেলে চলে তার সুরাহা হওয়া দরকার ছিল। তা না করে এক লাফে ১ টাকা ৪২ পয়সার ভাড়া করা হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। সঠিক ব্যয় বিশ্লেষণ করলে বড়জোর ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা যেত।
তিনি আরও বলেন, ভাড়া বাড়ানোর বৈঠকে কোনো যাত্রীর প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
৭ নভেম্বরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দূরপাল্লার বর্তমান বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি যাত্রীকে বাড়তি ৩৮ পয়সা গুনতে হবে। এছাড়া বড় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা, মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া মহানগরে বাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা, সেটা ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৪৫ পয়সা। মহানগরে মিনিবাসের বর্তমান ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা। সেটি বাড়িয়ে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারপ্রতি ৪৫ পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ আর মহানগরে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বাড়লো।
এর আগে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। এরপরই ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারাদেশে তিনদিন ধরে পরিবহন ধর্মঘট করেন মালিকরা।
নদী বন্দর / সিএফ