ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যমুনার পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা ফেনা। পানির চেয়ে এখন ফেনাই বেশি নজর কাড়ছে। দূর থেকে এই ফেনা যতটা সুন্দর, বাস্তবে ততটাই ভয়ংকর। পরিবেশকর্মীরা জানিয়েছেন, যমুনার পানিতে অ্যামোনিয়া ও ফসফেটের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণেই এমন ফেনা দেখা যাচ্ছে।
পরিবেশকর্মীরা আরও জানিয়েছেন, কল-কারখানার বর্জ্য পদার্থ যমুনা নদীর পানিতে অত্যধিক পরিমাণে মিশে যাওয়ার ফলেই দূষণের মাত্রা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দূষিত নদীতে এভাবে অসংখ্য মানুষের গোসল করা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দীপাবলির আগেই দিল্লিতে বায়ুদূষণ মাত্রা ছাড়িয়েছিল। এবার যমুনাতেও দূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সাদা বরফের মতো ফেনায় প্রায় পুরো যমুনার পানি ঢেকে গেছে। গত সোমবার ছিল ছট পূজার সূচনা। যমুনাকে বলা হয় অন্যতম পবিত্র নদী। তাই যমুনার পানিতে নেমে পূজা দেওয়া এবং গোসল করা দিল্লিবাসী বিহারীদের ছট পূজার একটি অংশ।
দিল্লির কালিন্দী কুঞ্জে দেখা গেছে, যমুনার পানিতে ভেসে আসা সাদা ফেনা গায়ে মেখেই ‘পুণ্যস্নান’ সারছেন বহু নারী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সাদা ফেনা অত্যন্ত বিষাক্ত। যা জলজ জীবদের জন্য যেমন ক্ষতিকারক, তেমনই মানুষের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু, তাতে কি! দূষিত যমুনার জলেই দিব্যি গোসল সেরে ছট পূজা চলছে।
এদিকে যমুনায় দূষণ বেড়ে যাওয়ার কারণে দিল্লিতে খাবার পানি সরবরাহেও প্রভাব পড়েছে বলে সরকারি একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে যমুনার পানির ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে বারবার সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন পরিবেশবিদরা।
যমুনার অনেকাংশে নোংরা পানি মেশা, দূষণের মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে তারা লড়াই চালালেও এতদিন প্রশাসনের টনক নড়েনি। কিন্তু এবার বিষাক্ত সাদা ফেনা পানিতে মিশে যাওয়ায় প্রশাসনের কপালেও ভাঁজ ফেলেছে। যমুনার পানিতে দূষণ নিয়ে দিল্লি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিজেপি সাংসদ মনোজ তিওয়ারি। এমনিতেই পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশে ফসলের গোড়া পোড়ানোকে ঘিরে গত কয়েক বছর ধরেই দূষণ বাড়ছে দিল্লিতে।
প্রতি বছরই শীতকালে দিল্লির বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এর ফলে হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট এমনকি ফুসফুসের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এই আবহে দীপাবলিতে দিল্লিতে সব ধরনের বাজি ফাটানো নিষিদ্ধ করেছিল আদালত। তবে তারপরেও রাজধানীর বায়ুতে দূষণের হার গুরুতর অবস্থায় পৌঁছেছে। ‘সিস্টেম অব এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং রিসার্চ’ জানিয়েছে, গত শনিবার রাতে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ৪৩৭।
বায়ু দূষণের পাশাপাশি এবার পানি দূষণের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্বভাবতই চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ দিল্লিবাসী। এর উপর শুরু হয়েছে আম আদমি পার্টি এবং বিজেপি নেতাদের বাকযুদ্ধ। একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
নদী বন্দর / এমকে