বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হলে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ চিড়িয়াখানা দেখতে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস না করে, প্রাণীদের কষ্ট না দিয়ে, প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট না করে কীভাবে চিড়িয়াখানাকে আধুনিক করা যায়, সে লক্ষ্যে আমরা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছি। আমরা প্রত্যাশা করছি, আমাদের চিড়িয়াখানার মহাপরিকল্পনা সিঙ্গাপুর চিড়িয়াখানার চেয়ে উন্নত হবে। এ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামগ্রিক উন্নয়নের একটি চিত্র।
রোববার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা জানান। জাতীয় চিড়িয়াখানা ও রংপুর চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন সংক্রান্ত দুই দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে শ ম রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে সরকার আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে চায়। এ ধারাবাহিকতায় জাতীয় চিড়িয়াখানা ও রংপুর চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ও রংপুর চিড়িয়াখানা বিশ্বমানে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় রয়েছি। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, এর সঙ্গে আমরাও সমান্তরালভাবে এগিয়ে চলেছি। আমরা চিড়িয়াখানা দেখতে দুবাই, সিঙ্গাপুর, হংকং কিংবা বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যাব না। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্ত থেকে মানুষ আসবে বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা দেখতে। পরিকল্পিতভাবে ও পরিবেশসম্মত উপায়ে চিড়িয়াখানার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন আজ বিশ্বের বিস্ময় উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, এ উন্নয়নের কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি বিস্ময়কর সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। তার আগ্রহ ও নির্দেশনায় আধুনিক চিড়িয়াখানা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী আরও যোগ করেন, চিড়িয়াখানার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা দীর্ঘ সময় নিতে চাই না। স্বল্প সময়ে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই। আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদেরকে সকল ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, মহাপরিকল্পনায় আমাদের লক্ষ্য থাকবে বৃক্ষ নিধন নয় বরং বৃক্ষ স্থানান্তর করে সাফারি পার্কের আদলে প্রাণীদের জন্য উন্মুক্ত এলাকা তৈরি করা। চিড়িয়াখানায় আমরা সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করতে চাই। সৌন্দর্যের বিকাশ ও আধুনিকায়ন আমরা একই স্থানে নিয়ে আসতে চাই। যাতে চিড়িয়াখানায় এসে দর্শনার্থীরা প্রকৃতির মধ্যে থাকার অনুভূতি পান।
শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের জন্য সময়োপযোগী, বিশ্বমানের প্রাকৃতিক সবকিছু আমরা একটি জায়গায় নিয়ে আসতে চাই। সে লক্ষ্যেই আমরা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছি। শুধু মহাপরিকল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এর আলোকে জাতীয় চিড়িয়াখানা ও রংপুর চিড়িয়াখানাকে আধুনিক, উন্নত ও বিশ্বমানে পরিণত করতে যাচ্ছি, যোগ করেন মন্ত্রী।
সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিবেশ ও বিদ্যমান অবকাঠামো উন্নয়নের কথাও এ সময় জানান মন্ত্রী। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় স্বাস্থ্যকর, পরিবেশসম্মত ও পরিচ্ছন্ন অবস্থা বিরাজ করছে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ। সেই বিস্ময়ের ছোট একটি অংশ হবে দৃষ্টিনন্দন, প্রাকৃতিক পরিবেশসম্মত, স্বাস্থ্যসম্মত ও আধুনিক জাতীয় চিড়িয়াখানা ও রংপুর চিড়িয়াখানা।
প্রণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তৌফিকুল আরিফ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মো. আব্দুল লতীফ। চিড়িয়াখানার মহাপরিকল্পনার রূপরেখা উপস্থাপন করেন সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বার্নার্ড হ্যারিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেডের টিম লিডার ও আন্তর্জাতিক চিড়িয়াখানা বিশেষজ্ঞ বার্নার্ড হ্যারিসন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এম ফেরদৌস আলম, আন্তর্জাতিক চিড়িয়াখানা বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চিড়িয়াখানা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নদী বন্দর / পিকে