সিলেটে সিটি করপোরেশন কর্তৃক পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, ছাতক পৌরসভার নামে ট্রাক প্রতি ৪৫০ টাকা চাঁদা আদায় বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে সিলেট বিভাগে সবধরনের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির ডাকে আগামীকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট শুরু হবে।
রোববার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সরকার।
তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সোমবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের পরিবহন বন্ধ রাখা হবে।
আবু সরকার জানান, ৫ দফা দাবি আদায়ের দাবিতে সিলেটে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। সেই সময় শেষ হচ্ছে আজ রোববার। কিন্তু আমাদের ৫ দফা দাবি আদায় হয়নি। তাই সোমবার সকাল ৬টা থেকে সিলেট বিভাগজুড়ে কোনো ধরনের গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না।
পরিবহন শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে- সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং: বি-১৪১৮) নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের দায়েরকৃত মামলাসমূহ প্রত্যাহার, মেয়াদ উত্তীর্ণ শেরপুর, শেওলা, লামাকাজী, শাহপরাণ ও ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ এবং চৌহাট্টাসহ নগরের বিভিন্ন স্থানে কার, মাইক্রোবাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশসহ সকল প্রকার গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থা করা। ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ, সিলেট জেলা অটোটেম্পু, অটোরিকশাচালক শ্রমিক জোট (রেজি নং: ২০৯৭) এর ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঘোষিত কমিটি বাতিল করা ও মনোনয়ন ফি বাবত আদায়কৃত সকল টাকা ফেরত প্রদান, সিলেটের আঞ্চলিক শ্রম দফতরের উপপরিচালককে প্রত্যাহার।
জানা গেছে, ধর্মঘট সফলের লক্ষ্যে ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ বিভাগের ৪ জেলার বিভিন্ন শাখা কার্যালয়ে গত ৩ দিন ধরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৫ দফা দাবি সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করছেন পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে।
সিলেটের সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা বলছেন, এসব দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন তারা। বার বার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে পরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধানের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন তারা। এ নিয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবার তারা সকল পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও জোটকে নিয়ে দেশের শীর্ষ পরিবহন সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের ব্যানারে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি নগরের চৌহাট্টায় অবৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদ নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে সিসিক ও পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরিববহন শ্রমিকদের ধর্মঘট ও কঠোর কর্মসূচির আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও সিসিক মেয়রের মধ্যে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে সিসিকের ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান ও মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।
সেই অনুযায়ী সিসিকের পক্ষ থেকে পরিবহন শ্রমিক নেতাদেরকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। কিন্তু সময়মতো আপসনামা প্রস্তুত না হওয়ায় ৮ জনের বিরুদ্ধে সিসিকের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। ফলে ভেস্তে যায় আপোসের উদ্যোগ। এ সময়ের মধ্যে পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় সম্প্রতি পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এরমধ্যে গত শুক্রবার সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ওমরাহ পালনে সৌদি আরব চলে যাওয়ায় সংকট আরো ঘনীভূত হয়। শেষ পর্যন্ত আইনি ব্যবস্থার পরিবর্তে আন্দোলনের দিকে ঝুঁকছেন পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
নদী বন্দর / জিকে