1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
বিলুপ্তির পথে লাফা বেগুন, বেশি ফলনের বেগুনে ঝুঁকছেন কৃষক - Nadibandar.com
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১৪৪ বার পঠিত

ময়মনসিংহের মাটি কৃষির জন্য যেন স্বর্গতুল্য। সব ধরনের ফল-ফসল ফলে এখানকার মাটিতে। কিছু শিল্পের পাশাপাশি গোটা জেলার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে মূলত কৃষি। একেকটি উপজেলা একেক রকম ফল-ফসলের জন্য বিখ্যাত। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারেও দৃশ্যমান এখানকার ফসলের আধিপত্য। এমন একটি সবজি জেলার গফরগাঁও উপজেলার লাফা জাতের গোল বেগুন। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে যার প্রসার ছিল বিদেশেও। কিন্তু উচ্চফলনশীল জাত, দীর্ঘমেয়াদি জাত, অন্য ফসলের আধিপত্যে বিলুপ্তির পথে এই বেগুন। চাষি ও কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, লাফা বেগুন বলে যে সবজিটি এখন বাজারে বিক্রি হয় সেটি আসল নয়।

 

সরেজমিনে জেলার গফরগাঁও, ফুলবাড়িয়া, সদরের বোরোরচর ঘুরে দেখা যায়, লেবু, টমেটো, কাঁচামরিচের পাশাপাশি মোটামুটি আধিপত্য ধরে রেখেছে বেগুন। তবে কৃষক খোঁজেন লাভ। গফরগাঁওয়ের চরআলগী একসময় কালো গোল বেগুনের জন্য ব্যাপক সুনাম কুড়ায়। জানা যায়, এই বেগুন একেকটি কেজির ওপরে হতো। গায়ে ঢেউ খেলানো। মসৃণ নয়। ভর্তা ও ভাজির জন্য বিশেষ চাহিদা ছিল সারাদেশে। অনেক কৃষক শুধু এই বেগুন চাষ করেই ঘুরিয়েছিলেন ভাগ্যের চাকা। তবে স্বল্পআয়ু, কম ফলন আর বেশি রোগের কারণে কৃষক ধীরে ধীরে সরে যান এই লাফা বেগুন চাষ থেকে। এখনো ইসলামপুরীসহ বিভিন্ন জাতের গোল বেগুন উপজেলায় উৎপাদন হচ্ছে। এসব বেগুনই চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে লাফা বেগুন বলে।

 

এ বিষয়ে গফরগাঁওয়ের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. লুৎফে আল মুয়িজ বলেন, মোট ১৯৫ হেক্টর জমিতে বেগুনের আবাদ হয়। এর মধ্যে ইসলামপুরী ৯০ হেক্টর, উত্তরা ৫৭, সিংনাথ ৩০ হেক্টর, লাফা ৩০ হেক্টর ও বিটি বেগুন ৩ হেক্টরে হচ্ছে। গফরগাঁওয়ের বিখ্যাত লাফা বেগুন যেটা, সম্ভবত সেটা হারিয়ে গেছে। জামালপুরের ইসলামপুরের একটি জাত সেটাকে লাফা বেগুন বলে বিক্রি করে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি এই বেগুনটা খুঁজে বের করতে, কিন্তু পাইনি। মুরব্বিরাও বলেন যেটা এখন পাওয়া যায় এটা লাফা বেগুন নয়।

‘উপজেলা পর্যায়ে এর জার্মপ্লাজম সংরক্ষণের সুবিধা নেই। তবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো গবেষক যদি এগিয়ে আসেন তাহলে হয়তো এটা সংরক্ষণ করা সম্ভব। বেগুনের অন্য উচ্চফলনশীল জাত চলে এসেছে, বেগুনের কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হলো প্রধান শত্রু। লাফা বেগুনে বেশি আক্রমণ করতো, শস্য ফলানোর প্যার্টার্নও পরিবর্তন হচ্ছে। লাফা বেগুন চাষ হয়, কিন্তু আদতে ওটা লাফা বেগুন নয় বলেই আমরা প্রমাণ পেয়েছি।‘

 

এ বিষয়ে গফরগাঁও উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আনোয়ার হোসেন বলেন, লাফা বেগুনটা মোটামুটি বিলপ্তির পথে বলেই আমরা জানি। আগের মতো মানুষ চাষ করছে না। কিছু কিছু এলাকায় পাওয়া যায় বলে শুনেছি, গবেষণা চলছে। কিন্তু এ জাতটা আমরা আসলে পাচ্ছি না। অন্য বেগুন চাষ অনেক বেশি হচ্ছে।

কালো গোল লাফা বেগুন মূলত শীতের মৌসুমে হয়। বোরোরচরে গিয়ে কথা হয় এক চাষির সঙ্গে। তিনিও গোল জাতের বেগুন করেছেন। তবে ফল আসেনি এখনো। জানালেন এটা শীতের বেগুন। তবে পাশের ক্ষেতে লম্বা জাতের বেগুনের ব্যাপক ফলন দেখা গেলো। এখানকার কয়েকশ’ হেক্টর জমিতে চাষ হয় বেগুন।

প্রায় ২০ বছর ধরে বেগুন চাষ করছেন ফুলবাড়িয়া উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের চাষি মফিজ উদ্দিন। বৈশাখ মাসে এক বিঘা জমিতে কালো লম্বা জাতের বেগুনের চারা লাগান বৈশাখ মাসে। আষাঢ় মাস থেকে ফসল তোলা হয়। খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। এক সপ্তাহ পরপর তোলা যায়। কোনো সপ্তাহে দুবারও ফলন ওঠে। প্রতিবার পান পাঁচ থেকে ১০ মণ করে। লাখ টাকা আয় ছয় মাসে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন মণপ্রতি ৪-৫শ’ টাকা। অন্য সময় মণ ১৫-১৬শ’ টাকাও বিক্রি করেছেন। তার বেগুন যায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন জায়গায়।

 

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আগে আরও বেশি জমিতে চাষ করতাম। এখন কম করি। পরিশ্রম বেশি। এজন্য লেবু, শিম চাষ করছি। পাইকাররা এসে নিয়ে যায়। আমারটা লালতীরের পারপল কিং বেগুন। গোল বেগুন বেশি দিন থাকে না। লম্বাটা প্রায় সারা বছর পাওয়া যায়। প্রায় এক বছর বিক্রি করা যায়।

ফুলবাড়িয়ার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. আবু রায়হান বলেন, এটা মূলত শিংনাথ বেগুনের মতো। প্রায় শেষ সময় এখন। বেগুন গাছের প্রধান শত্রু ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা। ডগা কেটে দেয় এবং ফল ছিদ্র করে ফেলে, ফলে দাম কমে যায়। আরেকটি বিষয় হলো বেগুন কিন্তু বাঁকা হওয়ার কথা নয়। এটা পুষ্টির অভাবে হয়।

 

‘কৃষক সাধারণত বোঝেন সার মানে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি। বোরন সার এখন কৃষক দিচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা হয় বেগুনে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে বেগুন লোভনীয় ফসল। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে লাভ হয়। আমরা কীটনাশককে নিরুৎসাহিত করি। মেহগনির বীজ দিয়ে কিন্তু পোকা দমন করা সম্ভব। উপজেলায় চারপা, বার্তা, কালাদহ, রাঙামাটিয়া, এনায়েতপুর ও নাওগাঁওয়ে বেশি বেগুন চাষ হয়।’

ফুলবাড়িয়া উপজেলার প্রায় ৪২৫ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হচ্ছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়।

নদী বন্দর / সিএফ

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com