‘ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে উড়োজাহাজটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবে- পাইলটের এমন ঘোষণার পরও যখন উড়োজাহাজটি আকাশে চক্কর দিতে লাগলো, আধঘণ্টারও বেশি সময় পর সেটি ল্যান্ড করে। বিমানবন্দরে অবতরণের পর টার্মিনালে এসে দেখি মানুষ আর মানুষ। কয়েকটি ফ্লাইটের যাত্রী একইসঙ্গে লাইনে থাকায় ইমিগ্রেশন শেষ করে বের হতে অনেকটা সময় লেগে যায়। তাছাড়া মালামাল বহনের জন্য যে ট্রলি দরকার সেই ট্রলিও খুঁজে পাইনি। নিরুপায় হয়ে মালামাল হাতে টেনে আনতে হয়েছে।’
শনিবার (১১ডিসেম্বর) ওমানফেরত একজন নারী প্রবাসী কর্মী শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এসব কথা বলেন। ফ্লাইট বিলম্বের অবতরণ, একই সময়ে কয়েকটি ফ্লাইটের যাত্রীদের ইমিগ্রেশনে লম্বা লাইন থাকায় বিলম্ব, মালামাল বহনের জন্য ট্রলি সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেন তিনি।
দাঁড়িয়ে থাকা আরেক প্রবাসী কর্মী বলেন, কী কারণে জানি না, তবে আমাদের উড়োজাহাজটি আকাশেহ এক থেকে দেড় ঘণ্টা চক্কর দিয়ে অবশেষে অবতরণ করে। নামার পর একই সঙ্গে দুই-তিনটি ফ্লাইটের যাত্রী ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়ানোয় সেখানে কাঁচাবাজারের মতো জনসমাগমপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
তিনি জানান, সময়মতো ল্যান্ড না করায় তিনি পরিবার-পরিজনের জন্য আগাম ট্রেনের টিকেট কেটে রেখেছিলেন। বিলম্বের কারণে ট্রেন মিস হয়েছে। সবমিলিয়ে তার ১০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
গত ১০ ডিসেম্বর থেকে রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠা-নামা বন্ধ করেছে বেসামারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বিমানবন্দরে হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ের নির্মাণ কাজের জন্য আগামী ৬ মাস রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা করে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকার কারণে দিন-রাতের অবশিষ্ট ১৬ ঘণ্টায় ২৪ ঘণ্টার শিডিউল ফ্লাইটের ব্যবস্থাপনা করতে হচ্ছে।
ফ্লাইট শিডিউল মিলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। নানা কারণে অনেক ফ্লাইট বিলম্বে ছাড়ছে। কোনো কোনো ফ্লাইট অবতরণের সবুজ সংকেত না পেয়ে আকাশে চক্কর দিয়ে পরে অবতরণ করছে। একই সময়ে একাধিক ফ্লাইটের যাত্রী নামায় তাদের ইমিগ্রেশনসহ সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সকলকে। দূরদেশ থেকে বিমানবন্দরে নামার পর দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ও মালামাল নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রলি খুঁজে না পেয়ে যাত্রীরা হৈচৈ করছেন। অনেক সময় মাছের বাজারের চেয়ে ‘খারাপ’ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। অসংখ্য যাত্রীকে মাথায় মালামাল বহন করে বাইরে বের হতে দেখা যায়। যাত্রীদের নিয়ে আসতে স্বজনরা এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। ফ্লাইট বিলম্বের কারণে তাদের রাস্তা-ঘাটে বসে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেবিচকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, করোনা মহামারির প্রকোপ কমে আসায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল ও যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর একদিনে শতাধিক ফ্লাইটে ২০ হাজারের বেশি যাত্রী যাওয়া-আসা করেছে। করোনার আগে স্বাভাবিক সময়েও এত বিপুল সংখ্যক যাত্রী যাতায়াত ছিল না।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাতে ৮ ঘণ্টা ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকার পরও স্বাভাবিক পরিবেশ ও যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে করণীয় নির্ধারণে বেবিচক চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে সভা করেছেন। ওই সভায় ট্রলি সমস্যাার সমাধানে এক সপ্তাহের মধ্যে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা ট্রলিলগুলো দ্রুততার সঙ্গে মেরামত করেতে বলা হয়। তাছাড়া আগামী মাসে নতুন ট্রলি আসছে বলে জানানো হয়।
বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং সমস্যা সমাধানে দেশীয় বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোকে ঢাকার বাইরের এয়ারপোর্টগুলোতে উড়োজাহাজ রাখার সাময়িক ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানানো হয়। একজন কর্মকর্তা উদাহারণ দিয়ে বলেন, আগে বেসরকারি যে এয়ারলাইন্সটি ঢাকা থেকে সিলেট বা কক্সবাজার গিয়ে ঢাকায় ফিরে আসতো, তাদের সিলেট বা কক্সবাজার থেকে ঢাকায় এসে আবার সিলেট ও কক্সবাজারে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার রিভার্সড শিডিউল তৈরি করতে বলা হয়।
বেবিচক সূত্রে আরও জানা গেছে, বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে ফ্লাই ফাস্টের প্রস্তুতির জন্য ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিমানবন্দরের রানওয়ে ব্যবহার করা হবে। এ পাঁচদিন সকাল ১০টা ১৫ মিনিট থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক ফ্লাইট ওঠা-নামা বন্ধ থাকবে।
নদী বন্দর / পিকে