শরীয়তপুর সদরের তুলাসার ইউনিয়নের বাইশরশি গ্রামের গৃহিণী সোনিয়া আক্তার পাখির ব্যতিক্রমী ছাদকৃষি সবাইকে চমকে দিয়েছে। তিনি তার স্বামী সাগির হোসেন ভূঁইয়ার সার্বিক সহযোগিতায় গত ছয় মাসে একতলা বাড়ির ছাদ সাজিয়েছেন নিজের স্বপ্নের মতো করে।
নিজের ছাদবাগানে বিদ্যুৎচালিত মোটর দিয়ে নিয়মিত পানি সেচ দেন সোনিয়া। অন্যদিকে নিজেই উৎপাদন করছেন জৈব সার। এ সারসহ গাছগুলোর গোড়ায় মাটি ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ দিচ্ছেন তিনি। ছাদকৃষি শুধু তিনি নিজেই করছেন না, গ্রামের অন্যদের করতেও উৎসাহিত করছেন। তার দেখাদেখি অন্যরাও উদ্যোগ নিচ্ছেন বাগান করার।
সম্প্রতি তার ছাদবাগানে গিয়ে দেখা যায়, একটি পানির পাত্রে লাফালাফি করছে মাছ। বিভিন্ন ধরনের গাছের ডালপালা বাতাসে দুলছে। সোনিয়ার ছাদজুড়ে যেন প্রকৃতি খেলা করছে। বাহারি ফুল, ফল, সবজি, ঔষধি গাছ ও লতায় ছেয়ে আছে ছাদের চারপাশ। এছাড়া তারা ছাদে রয়েছে শিশু ও বয়ষ্কদের জন্য দোলনা। ভবনের উত্তর পাশে রয়েছে মুরগি ও কবুতরের খামার। কবুতরগুলো উড়ে এসে বসছে ছাদে।
সোনিয়া আক্তার জানান, তিনি স্বামীর সহযোগিতায় শখের বশে অল্প কিছু গাছ এনে রোপণ করেন ছাদে। এরপরই মোবাইল ফোনে ইউটিউবে ভিডিও দেখে মাথায় বড় পরিসরে ছাদে বিভিন্ন ঔষধি গাছ ও ফুল-ফল-মূলের চারা রোপণ করেন তিনি। এখন তার ছাদে প্রায় ১০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন ধরনের ফুল-ফলসহ নানান ধরনের সবজি।
সোনিয়ার ছাদবাগানে ঔষধি গাছের মধ্যে আছে অর্জুন, আমলকী, তুলসী, হরিতকি, নিম, অগনিশিড়ি, থানকুনি, বাসক ও পাথরচুনা। শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে করলা, শিম, লাউ, ধনেপাতা, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, শ্যাম, ঢেঁড়শ, কলমি, লালশাক, মুলা, বাঁধাকপি, আদা, টমেটো, ভুট্টা, মিষ্টি আলু, বোম্বাই মরিচ, কালো মরিচ, সাদা মরিচ, বারই মরিচ, বরবটি, বাতাবিলেবু, কাগজি লেবু, আলু, মিষ্টি আলু, কচু, পুদিনাপাতা, পাটশাক প্রভৃতি।
ফলের মধ্যে রয়েছে জাম, জাম্বুরা, আম, পেয়ারা, ব্লাগ স্টোন, লেচু, মালটা, কলা, কামরাঙা, কাঁঠাল, সুপারি, আখ, কমলা, সফেদা, ডালিম, কদবেল, তেঁতুল, নারিকেল, আখ, আপেল, আমড়া, বড়ই, করমচা, পেঁপে, ড্রাগন, জলপাই, আঙ্গুর প্রভৃতি।
ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ ফুল, জবা ফুল, গাধা ফুল, বেলি ফুল, হাসনাহেনা, টাইম ফুল, মাইক ফুল, পলাশ ফুল, নয়নতারা, পর্তুলিকা, দুধরাজ, রঙন, মাধবীলতা, অপরাজীতা, মানিপাস, হাসনাহেনা, শিউলি, পাতাবাহার, অগ্নি সিরি, বাগানবিলাস, রজনীগন্ধা, নিলকণ্ঠ, মোরগফুল প্রভৃতি গাছ।
ছাদবাগান সম্পর্কে সোনিয়া আক্তার আরও বলেন, কৃষি আমার অনেক পছন্দের। তাই সংসার ও সন্তানদের সময় দিয়ে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার উদ্দেশ্য আমার। নিজ চেষ্টায় মাত্র দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে ছাদে এবাগান করেছি।
কীটনাশকমুক্ত সবজি ও ফল উৎপাদন করাই আমার মূল লক্ষ্য। আমি এ বাগান থেকে নিয়মিত কীটনাশকমুক্ত ফল-সবজি খেতে চাই। সোনিয়া সবাইকে সবুজায়ন ও কীটনাশকমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে এমন ছাদকৃষি করার আহবান জানিয়েছেন।
নদী বন্দর / সিএফ