পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের চরকাতরা গ্রামের লাফা বেগুনের সুনাম দেশব্যাপী। তবে সে বেগুনের ঐতিহ্যকে ছাড়িয়ে গেছে চাটমোহর উপজেলার কৃষক সেলিম শেখের বাড়ির একটি লাফা বেগুন গাছ। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো একটি বেগুন গাছের জন্য দিতে হয়েছে মাচা (জাংলা)। ওই চাষি এক মাসে ফলন পেয়েছেন এক মণের বেশি বেশি। বিক্রি হয়েছে প্রায় দুই হাজার টাকার।
সেলিম শেখ চাটমোহর উপজেলার মথুরারপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে। ব্যতিক্রমী বেগুন গাছ দেখতে তার বাড়িতে অনেকেই আসছেন। দেখার পর অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
কৃষক সেলিমের লাগানো বেগুন গাছটি কাঁটাযুক্ত জাতের। কাঁটাযুক্ত বেগুন খুব সুস্বাদু হয়। তিনি চার মাস আগে শখের বসে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ওই জাতের একটি বেগুন গাছ এনে বাড়ির আঙিনায় লাগান। গাছটি দ্রুত বাড়তে থাকে। গাছটির ডালপালা এত দ্রুত বাড়ে যে, শেষমেশ মাচা দিতে হয়। এজন্য আলাদা মাচা অবশ্য বানাতে হয়নি তাকে।
সেলিম শেখ জানান, আগে পুঁইশাকের জন্য মাচা করেছিলেন। সেই মাচাটি ভেঙে না দিয়ে তিনি সেখানে বেগুন গাছ তুলে দেন। মাচায় পরিধি বাড়তে থাকে গাছটির। এরপর ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় গাছটি। বেগুনে ভরে যায় মাচা।
ব্যতিক্রমী এই বেগুন গাছটির বয়স প্রায় চার মাস। এক মাসে এক মণের বেশি বেগুন বিক্রি করেছেন সেলিম শেখ। ৭০ টাকা কেজি থেকে শুরু করে ৪০ টাকা কেজি পর্যন্ত দরে বিক্রি করছেন বেগুন। ২০ কেজির বেশি বেগুন তিনি নিজে খেয়েছেন ও আত্মীয়দের দিয়েছেন। এছাড়া প্রতিদিনই তিনি গাছের বেগুন তুলে খাচ্ছেন।
সেলিম শেখ জানান, তিনি নিজেও কখনও ভাবেননি যে বেগুন গাছের জন্য মাচা লাগবে। আবার একটি বেগুন গাছ থেকে এতো পরিমাণ বেগুন পাবেন। এ গাছটির বেগুন খেতেও সুস্বাদু বলে জানান তিনি।
ক্ষেতে বেগুন চাষ করলে প্রায় প্রতিদিনই কীটনাশক দিতে হয়। তবে এই গাছটিতে একটিবারের জন্যও কীটনাশক দেননি সেলিম শেখ। এমনকি সারও দেননি। কোনো পোকামাকড়ের আক্রমণও হয়নি।
বেগুন গাছটির বিষয়ে জানার পর নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি গাছ থেকে বেগুন দ্রুতই তুলে ফেলছেন। এতে বেগুনগুলো দ্রুত বড় হচ্ছে। আরও কয়েক মাস বেগুন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন কৃষক সেলিম শেখ।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবু বক্কার সিদ্দিক বলেন, ‘এ বাড়িতে ভোট চাইতে এসে বেগুন গাছটি দেখে অবাক হযে যাই। আমিই কৃষি বিভাগকে ব্যতিক্রমী এ বেগুন গাছটির কথা জানাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘আমরাও কৃষক মানুষ। ক্ষেতে বেগুন চাষ হয় বলেই জানি। তবে এভাবে মাচায় করে যে বেগুন চাষ করতে হয়, তা এটাই প্রথম দেখলাম।’
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ জানান, তিনি নিজে এসে গাছটিতে ৬৫টি বেগুন ঝুলতে দেখেন। তার জানামতে এটি একটি কাজললতা জাতের বেগুন গাছ।
তিনি আরও বলেন, গাছটি যেহেতু আলাদা বৈশিষ্ট্যে বেড়ে উঠেছে তাই স্থানীয় কৃষি বিভাগ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা এ বেগুনের বীজ নিয়ে পরীক্ষা করবেন। যদি পরবর্তী সময়ে সাফল্য আসে তাহলে চাষিদের মধ্যে এ জাতের বীজ বিতরণের জন্য তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
নদী বন্দর / সিএফ