1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
খেজুর গাছ থাকলেও গাছি মেলা ভার ফরিদপুরে - Nadibandar.com
রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলে ডিইউজের উদ্বেগ প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করলেন মির্জা ফখরুল পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৩ বিলিয়ন ডলার: গভর্নর আফগান সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ১৯ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত সংস্কারের বিষয়ে সরকার একা সিদ্ধান্ত নেবে না: উপদেষ্টা মাহফুজ রোববার থেকে দক্ষিণ সিটিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাজ শুরু আগামী বিজয় দিবসের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করা হবে দখলদাররা যত প্রভাবশালী হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে: রিজওয়ানা হাসান জুলাই বিপ্লব ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না: ধর্ম উপদেষ্টা একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় দুই হাজার কোটি টাকা
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১৫৫ বার পঠিত

ফরিদপুরে একদিকে কমছে খেজুর গাছ, অন্যদিকে হারিয়ে যাচ্ছে গাছি (গাছ থেকে রস সংগ্রহকারী) সম্প্রদায়। এক সময় পল্লী গ্রামে ঘুরে ঘুরে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতেন গাছিরা। জেলা-উপজেলার প্রতিটি গ্রামে অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল। তখন প্রতিটি গ্রামে গড়ে ৮ থেকে ১০ জন পেশাদার গাছি পাওয়া যেত। এখন আর সেদিন নেই।

গাছিদের পেশা বদল, নতুন করে এ পেশায় (গাছি) কেউ না আসাসহ নানা কারণে একেবারেই যেন ফরিদপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গাছি। বর্তমানে প্রতি গ্রাম তো দূরে থাক কয়েক গ্রাম খুঁজলেও পেশাদার একজন গাছির সন্ধান মিলবে কিনা সন্দেহ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলার প্রতিটি গ্রামগঞ্জ ও বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে আগের তুলনায় খেজুর গাছের সংখ্যা কমেছে। তারপরও যা আছে তা থেকে রস সংগ্রহকারী গাছি নেই। গাছির অভাবে প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয় না। আর টাকার লোভ দেখিয়ে এই অনাবাদি খেজুর গাছগুলো অবৈধ ইটভাটার মালিকরা কেটে নিয়ে যান।

রোপণ কম, অনাবাদি পড়ে থাকা, অনাগ্রহ, ভেজাল গুড় তৈরিসহ নানা কারণে যেমন খেজুর গাছ হ্রাস পাচ্ছে। তেমনি খেজুর গাছ কমে যাওয়া, রস ও গুড়ের ঐতিহ্য হারানোর কারণে গাছিও কমে যাচ্ছে।

 

বোয়ালমারীর সোতাশী গ্রামের মো. গফফার সেখ। তিনি ২০-৩০ বছর ধরে খেজুর গাছ কেটে রস বের করছেন। তিনি একজন পুরনো গাছি হিসেবে বলেন, আগের মতো এলাকায় খেজুর গাছ নেই। আর খেজুর গাছ কেটে এখন পেট চলে না। বয়স হয়েছে, তাই গাছির পেশা ছেড়ে দিয়েছি।
চালিনগর গ্রামের মো. সাহিদ মোল্লা বলেন, গাছির পেশায় সংসার চলে না। তাই এখন ওসব বাদ দিয়ে নসিমন চালাই।

সালথা উপজেলার যদুনন্দি ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের হরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর আগে আমার নিজের প্রায় শতাধিক খেজুর গাছ ছিল।

রসের মৌসুমে গ্রামের তিনজন পেশাদার গাছি বছর চুক্তি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। আমি নিজেও তাদের সঙ্গে নিয়ে গাছির কাজ করতাম। সেসব গাছিরা পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। রক্ষণাবেক্ষণ আর গাছির অভাবে আমার গাছ কমতে কমতে এখনমাত্র ১০/১২টি। নিজেদের রস ও গুড়ের চাহিদা মেটাতে শুধু নিজেই এখন কাজ করি।

 

বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, সালথা উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের কয়ড়া গ্রামের জয়বাংলা মোড়ে সানাল মুন্সি নামের একজন গাছিকে খেজুর গাছে হাঁড়ি নিয়ে উঠতে দেখা যায়।

তিনি জানান, ৩০-৩৫ বছর ধরে তিনি গাছির পেশায় আছেন। তার বাবাও একজন গাছি ছিলেন। তবে এ পেশায় এখন আর বেশি মানুষ নেই। সংকট চলছে।

গাছি মো. রঞ্জন মোল্লা বলেন, ৩০-৪০ বছর ধরে এ পেশা আঁকড়ে ধরে আছি। তবে আগের মতো আর পেশাদার হিসেবে নয়। শৌখিন গাছি হিসেবে অল্প কিছু গাছ কেটে রস বের করছি।

 

গাছিরা জানান, আগের মতো এলাকায় খেজুর গাছ নেই। যার কারণে বেশিরভাগ গাছি পেশা বদলেছেন।

শীত আসলেই সকালে খেজুরের রস এবং মুড়ি ছিল গ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। তখন ১ কেজি গুড়ের দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বর্তমানে বাজারে ১ কেজি গুড়ের মূল্য ৩০০ টাকা। তখন গুড় বিক্রি করে চলতো গাছিদের সংসার। দুপুর হলেই গাছিরা হাঁড়ি নিয়ে ছুটে যেতেন গ্রামের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়। এখন আর দেখা মেলে না গাছিদের।

এ বিষয়ে ‘ঘুরি-ফিরি ফরিদপুর’ ফেসবুক পেজের মডারেটর ও ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা) শিক্ষার্থী ইকবাল মাহমুদ ইমন বলেন, আমাদের জেলা ফরিদপুর খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত হলেও এখন আর আগের মতো খেজুর গাছ নেই। রস ও গুড়ের চাহিদাও মেটে না। খেজুর গাছ রসের উপযোগী করে তৈরি করতে গাছির প্রয়োজন, কিন্তু গাছিদের এখন আর দেখা যায় না।

 

আগে হেমন্তের শেষ ও শীতের শুরুতেই গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন খেজুর গাছ নিয়ে। কিন্তু গত কয়েক বছর গাছি সংকটে অসংখ্য খেজুর গাছ অনাবাদী পড়ে থাকে। ফলে ওইসব গাছগুলো ইটভাটায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। এছাড়াও রোপণ কমে যাওয়া ও জ্বালানী সংকটসহ ভেজাল গুড়ের দাপটে ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এর জন্য দায়ী।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হযরত আলী বলেন, দিনে দিনে ব্যাপকহারে হ্রাস পাচ্ছে খেজুর গাছ। সেইসঙ্গে গাছির সংখ্যাও একেবারে কমে গেছে। খেজুর গাছ কেটে রস বের করা একটা শিল্প। কিন্তু সেই শৈল্পিক পেশাদার গাছি এখন তো চোখেই পড়ে না। পুরো জেলায় কতজন গাছি টিকে আছেন তারও পুর্ণাঙ্গ তালিকা নেই। নতুন করে তালিকা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান খেজুরগাছের সঠিক পরিচর্যার পাশাপাশি নতুন করে খেজুরগাছ রোপণ করা জরুরি উল্লেখ করে বিভিন্ন সভা, সেমিনারে, ওয়ার্কশপে আলোচনা ও পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

নদী বন্দর / এমকে

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com