মাঠজুড়ে সরিষার ক্ষেত। যেদিকে চোখ যায় সরিষার হলুদ ফুলের সৌন্দর্যে মন জুড়িয়ে যায়। শীতকালীন শস্য সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষি বাদশা। বর্তমানে সরিষা ক্ষেতের মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছিরা।
মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা ৯০টি বাক্স সরিষা ক্ষেতের লাগোয়া স্থানে সারিবদ্ধভাবে রেখে দিয়েছেন মৌচাষি বাদশা।
মৌমাছিতে টইটম্বুর প্রতিটি বাক্স। বাক্সগুলো থেকে সরিষা ক্ষেতের ফুলে ফুলে ভোঁ ভোঁ শব্দ তুলে ঢুঁ মারতেছে প্রশিক্ষিত মৌমাছিরা। এভাবে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চলে আসে বাক্সে। বাক্সগুলোর ওপরের অংশটা মোড়ানো কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে।
বাক্সগুলোর ভেতরে কাঠের তৈরি আটটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো এক ধরনের সিট বিশেষ কায়দায় লাগানো। সেগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি বাক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয়েছে রানি মৌমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করছে হাজারো পুরুষ মৌমাছি।
রানির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। একটি রানি মৌমাছির বিপরীতে কয়েক হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে একেকটি বাক্সে।
সম্প্রতি সরেজমিনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের জালালের মোড় সংলগ্ন বানিয়া পাড়া গ্রামে গিয়ে চলতি মৌসুমে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে দেখা গেছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার নব্দিগঞ্জ ইউনিয়নের ফতা গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মিয়াকে।
এসময় আলাপকালে সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি এসব তথ্য জানান।
প্রতি বছরের এসময়ে তিনি এভাবেই মধু সংগ্রহ করেন। একই ধারাবাহিকতায় এবারো ৪০ দিন সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করবেন তিনি।
মৌচাষি বাদশা মিয়া জানান, তিনি ২০ দিন ধরে সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের জালালের মোড় সংলগ্ন বানিয়া পাড়া গ্রামে মধু সংগ্রহ করছেন। ওই গ্রামের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত সংলগ্ন জমিতে ৯০টি বাক্স বসিয়েছেন তিনি। এসব বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৬-৭ মণ মধু পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৬ মণ মধু পেয়েছেন তিনি। পুরো মৌসুমে ৪০ মণের উপরে মধু পাওয়ার আশা তার।
বাদশা মিয়া বলেন, আমি ৯০টি বাক্স থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ মণ মধু পেয়েছি। ৪০ দিনে ৪০ মণের উপরে মধু পাওয়ার আশা আছে। প্রতি সপ্তাহে বাক্সগুলো থেকে মধু সংগ্রহ করছি। প্রতি মণ মধু বর্তমানে পাইকারি ৮০০০-১০০০০ টাকায় বিক্রি করছি।
খুচরা ক্রেতাদের কাছে প্রতি কেজি মধু ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। তবে বাজার দর ভালো পেলে প্রতি মণ মধু পাইকারি ১৪০০০-১৫০০০ টাকা দরে বিক্রি হবে। আশা করছি ৪০ দিনে যে পরিমাণ মধু সংগ্রহ হবে তা বিক্রি করে খরচ বাদে এক লাখ টাকার উপরে আয় করব।
স্থানীয়রা জানান, মৌচাষি বাদশা মিয়া অত্যন্ত পরিশ্রমী। সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌচাষিগুলো বাক্সে ফিরে আসার দৃশ্য খুবই ভালো লাগে। আমরা স্থানীয়রা দেখে আসছি বাদশার সরিষা ফুলের মধুতে কোনো প্রকার ভেজাল নেই। গুণে ও মানে অত্যন্ত ভালো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৩ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৩০৫ হেক্টর বেশি। সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের চেয়েও এবছর ১৫০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। এসব সরিষা ফুল থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে মধু সংগ্রহ করছে মৌচাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক বলেন, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে কুড়িগ্রাম জেলা এবারও সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে এসব সরিষা ফুল থেকে বাণিজ্যিকভাবে মধু সংগ্রহ করছে মৌচাষিরা।
সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে ও মানে অত্যন্ত ভালো। সরিষা ফুলের মধুতে কোনো প্রকার ভেজাল থাকে না। একেবারে খাঁটি। আর এভাবে মৌমাছি চাষ করে মধু আহরণের মাধ্যমে বাড়তি আয় করে লাভবান হচ্ছেন অনেকেই।
নদী বন্দর / পিকে