দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রক চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের বহরে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক টাগবোট কান্ডারি-৬। রোববার (২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এটির উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
এসময় তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দেশের চালিকাশক্তি। আজ বাংলাদেশের যে উন্নয়ন চলছে, তার গেটওয়ে হচ্ছে এই বন্দর। এটি নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনা মহামারিতেও পণ্য-কনটেইনার হ্যান্ডলিং অব্যাহত রেখেছে বন্দর। মূলত সরকারের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপে গতি ধরে রেখেছে বন্দর।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্দরে যেখানে জট লেগে আছে, সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যতিক্রম। গেলো বছরে এই বন্দরে ইতিহাসের রেকর্ড পরিমাণ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। এছাড়া কার্গো হ্যান্ডলিং ও জাহাজ আসার সংখ্যাও বেড়েছে বন্দরে। আজ (রোববার) একটি অত্যাধুনিক টাগবোট, সার্ভিস জেটি ও ওভার-ফ্লো ইয়ার্ডসহ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়বে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর মেরিটাইম সেক্টর নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ স্বাধীনের পর তিনি চট্টগ্রাম বন্দর পুনর্গঠন করেছিলেন। এই সেক্টর নিয়ে জাতিসংঘ যে পরিকল্পনা নিয়েছে, বঙ্গবন্ধু তার দশ বছর আগে একই পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে এ দেশের উন্নয়ন থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার সুযোগ্য কন্যা পুনরায় সেই উন্নয়নের গতি ফিরিয়ে এনেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আমলেই চারটি মেরিন একাডেমি করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান বলেন, ‘এশিয়ার বিভিন্ন বন্দরে ৭২টি জলদস্যুর ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশের জলসীমায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এজন্য বিদেশে চট্টগ্রামের বন্দরের সুনাম বেড়েছে। আজ বন্দরের অত্যাধুনিক টাগবোট, ওভার-ফ্লু ইয়ার্ড, সার্ভিস জেটি, সুইমিং পুল ও টেনিস কোর্ট-বাস্কেটবল গ্রাউন্ডসহ মোট পাঁচটি প্রকল্প উদ্বোধন হচ্ছে।’
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, সরকার গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছে। এতে করে দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যাপকহারে বাড়ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ছে জাহাজ গমনাগমন ও পণ্য হ্যান্ডলিং। এই বর্ধিত জাহাজ গমনাগমনের সুবিধার্থে বন্দরের পরিসীমা বাড়ানো হয়েছে, তৈরি করা হচ্ছে নতুন বন্দর অবকাঠামো এবং সংগ্রহ করতে হচ্ছে সহায়তাকারী বিভিন্ন ধরনের জলযান। বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের টাগবহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে কান্ডারি -৬।
এর ফলে বন্দরে তুলনামূলক বড় জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধা সৃষ্টি হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম-মাতারবাড়ী এলাকায় গৃহীত প্রকল্প ও জেটিগুলো বেশি সংখ্যক বড় জাহাজ বার্থিং-আনবার্থিং ক্ষমতা বাড়বে। আবার বন্দরে আগত বড় বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর নিরাপদ বার্থিং-আনবার্থিংয়ে সহায়তা করবে টাগবোটটি।
উদ্বোধন হওয়া নিউমুরিং ওভার-ফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড ও দ্বিতীয় ওভার ফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ডে প্রায় চার হাজার টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘের একক) কনটেইনার ধারণক্ষমতা রয়েছে। প্রথম প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৯৭ কোটি ৮২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ও দ্বিতীয় প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৭৮ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, সচিব মো. ওমর ফারুকসহ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নদী বন্দর / জিকে