রাজধানীর গুলিস্তানের হানিফ ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনাকবলিত মেঘলা পরিবহনের বাসটির বেশ কিছুদিন ধরে ব্রেকে সমস্যা ছিল। আর চালক হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) দিয়েই বাসটি চালাচ্ছিল। শনিবার রাতে ঘাতক বাসটির চালক মো. রাকিব শরীফকে (২৫) গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পেয়েছে র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রোববার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে গতকাল শনিবার সকালে হানিফ ফ্লাইওভারে মেঘলা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। এতে শেখ ফরিদ ও মো. বাদশা মিয়া নামে দুইজন নিহত হন। এছাড়া বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনার পর বাসটির চালক সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ওয়ারী থানায় একটি মামলা করা হয়।
কমান্ডার মঈন জানান, ওয়ারীতে অভিযান চালিয়ে মেঘলা পরিবহনের ঘাতক বাসটির চালক রাকিব শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার রাকিব জানিয়েছে, সে ৭/৮ বছর আগে থেকে মেঘলা পরিবহনে একাধিক বাসের হেলপারি করত; পাশাপাশি ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ নেয়। হেলপারি ছেড়ে নিজেই বাস চালানোর জন্য মেঘলা পরিবহনের বিভিন্ন মালিকদের কাছে অনুরোধ করে। কিন্তু তার বৈধ লাইসেন্স না থাকায় মালিকরা তাকে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে তদবিরের মাধ্যমে রাকিব মেঘলা পরিবহনের বিভিন্ন বাস চালানো শুরু করে। ২০১৯ সাল থেকে সে হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) দিয়ে ভারি মোটরযান চালানো শুরু করে। কিন্তু তার ভারি মোটরযান চালানোর মত কোনো বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) ছিল না।
র্যাব মুখপাত্র জানান, দুর্ঘটনার ১৫ দিন আগে থেকে বাসটির মালিক সবুর মিয়ার কাছ থেকে দৈনিক ২ হাজার ২৫০ টাকা জমা দিয়ে বাসটি চালানো শুরু করে। ঘটনার দিন সকালে ভূলতা গাউছিয়া থেকে গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। আনুমানিক সকাল সাড়ে নয়টার দিকে যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে গুলিস্তান সংযোগে নামার সময় বাসের অধিক গতি থাকার কারণে এবং ব্রেক কাজ না করায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার বাম পাশে আইলেনের সঙ্গে ঘেঁষে নামতে থাকে। এই সময় ফ্লাইওভারে অন্য একটি বাস থেকে যাত্রী নামছিল। তাদের মধ্যে বাসটি কয়েকজনকে ধাক্কা দেয়। এতে দুইজনের মৃত্যু হয় এবং কয়েকজন আহত হন।
গ্রেফতার রাকিব জানিয়েছে, বাসের দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ভাড়া মালিককে পরিশোধ ও অধিক মুনাফা লাভে সে ট্রিপ বাড়াতে প্রতিযোগিতামূলক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল। বেশি গতির কারণে ফ্লাইওভার দিয়ে নামার সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পথচারীদের চাপা দেয়।
বেপরোয়া গতি ও পরিবহন নৈরাজ্য থামছে না এর সমাধান কী এমন প্রশ্নে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন বলেন, কিছুদিন আগে আমাদের ছাত্ররা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেছে। সড়কে দুর্ঘটনা কারোই কাম্য নয়। সম্প্রতি আমরা দেখেছি সড়কে বেশকিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেখানে আমরা কাজ করতে গিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর বিষয়গুলো পেয়েছি। অনেকের গাড়িতে আমরা দেখেছি ফিটনেসের সমস্যা ছিল। আমরা একটি বিষয় বলতে চাই, অপরাধ করে কেউ পার পাবেন না।
তিনি আরও বলেন, র্যাব মনে করে সড়ক খাতের যত মালিক আছেন ও চালক আছেন; শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বলবো না সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কাজ করতে হবে।
দ্রুতগতি ও প্রতিযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পরে চালক পালিয়ে যায়।
গ্রেফতার চালক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, প্রতিদিন গাড়ির জমা হিসেবে ২২৫০ টাকা গাড়ির মালিককে দিতে হয়। এরপর তো রাস্তার খরচ রয়েছে। তারপর নিজের বেতন, সহকারীর বেতন। সবকিছু মিলিয়ে দ্রুতগতিতে আয়ের একটি প্রবণতা ছিল।
পাশাপাশি অনেক সময় গাড়ির সমস্যার কথা বললে মালিকরা গুরুত্ব দেন না। চালকরা বললেও মালিকরা গাড়ির কাজ করান না। এছাড়া চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেসের বিষয়ে মালিকদের আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ঘটনা ঘটার পরে মাঠে নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু ঘটনার আগে মাঠে নামলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাইসেন্সের বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব বিআরটিএ’র, গাড়ির কাগজ ও ফিটনেস পরীক্ষা করে পুলিশ। র্যাবও বিভিন্ন সময়ে কাজ করছে। তারপরও আমি বলবো আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।
নদী বন্দর / পিকে