স্থানীয় নির্বাচনের প্রচারণায় এমপিদের অংশগ্রহণে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আচরণবিধি অনুযায়ী যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, এমপিরা কোনো স্থানীয় নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। অথচ আশপাশের কোনো দেশে এ ধরনের আচরণবিধি নেই। ইউরোপেও নেই এমন বিধিনিষেধ। ফলে এমপিদের ওপর নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের বিধিনিষেধ বৈষম্যমূলক।’
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি নৌকার পক্ষে কাজ করবেন। আমি মনে করি এটিই সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেটি নিয়ে দেখলাম কিছু গণমাধ্যমে শামীম ওসমান নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন এমন কথা বলা হয়েছে। অথচ অন্যান্য দেশে মন্ত্রী এবং এমপিরা তাদের প্রটোকল বাদ দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন। পার্শ্ববর্তী দেশে মুখ্যমন্ত্রীরাও পারেন, মন্ত্রীরাও পারেন। সেক্ষেত্রে শুধু প্রটোকল সুযোগ-সুবিধা বাদ দিতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালেও এ ধরনের কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। অনেকেই বলছেন, এই বিধিনিষেধ অগণতান্ত্রিক। আমাদের দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি বেশ কয়েকবার নির্বাচন কমিশনের নজরে আনা হয়েছে এবং কয়েকটি বৈঠকে আমি নিজেও ছিলাম। সেখানে এ বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছিল।’
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী ‘করোনার সঙ্গে আওয়ামী লীগকে তুলনা করেছেন’, এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রিজভী সাহেবের এই বক্তব্যে মনে হয়, আসলে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেতারা আবোল-তাবোল বলছেন, এটি তারই ধারাবাহিকতা।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে করোনা মোকাবিলা করেছেন, সেটি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোসহ অনেক দেশই করতে পারেনি। এটি সারা বিশ্ব কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে। করোনা মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হওয়ার কারণে আমাদের দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা আছে। মহামারিতে গত বছরে বিশ্বের মাত্র ২০ দেশে ইতিবাচক জিডিপি গ্রোথ হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা এবং টিকা নিয়েও বিএনপির নেতারা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন, আবার নিজেরাই করোনার টিকা নিয়েছেন। রিজভীসহ বিএনপির সামনের সারির নেতারা ফ্রন্টলাইনার, কারণ তারা রাজনীতির মাঠে সামনে থেকে সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করছেন। আমরা চাই, তারা সুস্থ থাকেন এবং ফ্রন্ট লাইনার হিসেবে বুস্টার ডোজ নেবেন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে দেশে ধ্বংসাত্মক রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছিল। তারা পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে। দিনের পর দিন হরতাল, অবরোধের মাধ্যমে মানুষকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মানুষ সেই রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা যে আবার সেই পথে হাঁটতে পারে, সেটির ইঙ্গিত স্পষ্ট। এবার দেশের মানুষ তাদেরকে প্রতিহত করবে।’
এর আগে তথ্যমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে নিজ নির্বাচনী উপজেলা রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সমতল ভূমিতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সমন্বিত প্রকল্পের আওতায় ভেড়া ও শেড নির্মাণসামগ্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ সহায়তার আওতায় শিক্ষার্থীদের মাঝে সাইকেল ও শিক্ষাবৃত্তি বিতরণ করেন।
এছাড়া ৪৩তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উপলক্ষে বিজ্ঞান মেলায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় স্কুল-কলেজের ১২-১৮ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইফতেখার ইউনুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শমসের আলম, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আকতার হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল বাসার প্রমুখ।
নদী বন্দর / বিএফ
