ফেনীতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করতে পারছে না খাদ্য বিভাগ। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতে না পারায় জেলায় আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ৭ নভেম্বর শুরু হওয়া এ অভিযানে বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাত শতাংশ ধান সংগ্রহ হয়েছে।
চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযানের দৈনিক প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপসের মাধ্যমে ফেনী সদরে ২০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯১৩ মেট্রিক টন। একইভাবে ছাগলনাইয়ায় ৫৩১ মেট্রিক টনের স্থলে ২৩ ও দাগনভূঞায় ৪৮৫ মেট্রিক টনের স্থলে মাত্র তিন মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। এ তিন উপজেলায় অ্যাপসের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হয়।
সংগ্রহের লক্ষমাত্রা
(মে:টন) |
১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্জন
(মে:টন) |
লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি
(মে:টন) |
এ পর্যন্ত অর্জন
(শতকরা) |
লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়নি
(শতকরা) |
|
সিদ্ধ | ২৩৮৪ | ১৩৮৮ | ৯৯৫ | ৫৮.২২% | ৪১.৭৭% |
ধান | ৩৬৭১ | ২৮৫ | ৩৩৮৫ | ৭.৭৬% | ৯২.২৩% |
তবে সরাসরি কৃষকদের থেকে সংগৃহিত গুদামে তুলনামূলক বেশি ধান সংগ্রহ হয়েছে। সোনাগাজীতে এক হাজার ৫০ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার স্থলে সংগ্রহ হয়েছে ৭৯, পরশুরামে ৩৩৬ মেট্রিক টনের স্থলে ২৬ ও ফুলগাজীতে ৩৫৬ মেট্রিক টনের স্থলে সংগ্রহ হয়েছে ১৩৩ মেট্রিক টন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে ধান দেয়াকে বিড়ম্বনা মনে করেন। তাই সরাসরি সংগৃহিত উপজেলায় তুলনামূলক বেশি ধান সংগ্রহ হয়েছে।
ফেনী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের প্রধান সহকারী সঞ্জিত পাল জানান, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় তিন হাজার ৬৭১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭ নভেম্বর থেকে সব উপজেলায় প্রতিমণ ধান এক হাজার ৮০ টাকা মূল্যে সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ অভিযানের সময়সীমা শেষের দিকে হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২৮৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাত ভাগ।
তিনি জানান, এবার সরকারি নির্দেশনার আলোকে ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া ও দাগনভুঞা উপজেলায় অ্যাপসের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ হচ্ছে। বাকি তিন উপজেলায় সরাসরি গুদামে ধান দিচ্ছেন কৃষকরা।
প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা জানান, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে নানা বিড়ম্বনা রয়েছে। গুদামে ধান নিয়ে আসার আগেই নমুনা জমা দিতে হয়। এরপর কর্মকর্তারা নমুনা দেখে ধান নেবেন কিনা এবং কবে নেবেন সেটি নিশ্চিত করেন। এজন্য বারবার গুদামে যোগাযোগ করাটা এক ধরনের বিড়ম্বনা। এছাড়া কৃষক অ্যাপ ব্যবহারে এখনও অভ্যস্ত হয়নি। ফলে অ্যাপসকে তারা ঝামেলা মনে করে।
ফেনীর বিভিন্ন বাজার পরিদর্শনে দেখা যায়, বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০ টাকায়। ফড়িয়ারা নগদ টাকায় সরাসরি কৃষকের ধান সংগ্রহ করছেন। এছাড়া ফড়িয়াদের খবর দিলে তারা কৃষকের বাড়ি থেকেও ধান নিয়ে যায়। এতে কৃষকের পরিবহন বাবদ বাড়তি ব্যয় ও বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না।
ফেনী সদর উপজেলার আবুল হাসেম নামের এক কৃষক জানান, বালিগাঁওয়ের হকদি গ্রাম থেকে দুইশ টাকা ভাড়া দিয়ে ধানের নমুনা দিয়ে আসি। পরের দিন ট্রাক ভরে ধান গুদামে দেই। দুইদিন পর অ্যাকাউন্টে ধানের মূল্য পরিশোধ করা হয়। ধান বিক্রির তিন থেকে চারদিন পর টাকা পাই। পরিবহন ভাড়া থেকে শুরু করে সব খরচই পকেট থেকে দিতে হয়েছে। যা কৃষকের জন্য বিরক্তিকর। এছাড়া অনেক কৃষক অ্যাপ বোঝে না। এসব কারণে কৃষক সরকারি গুদামে ধান দিতে চায় না।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রূপম চাকমা জানান, ফেনীর ছয় উপজেলার তিনটিতে অ্যাপের মাধ্যমে ও বাকি তিনটিতে সরাসরি ধান ও চাল সংগ্রহ চলছে। ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চুক্তিবদ্ধ চার মিল থেকে ৫৮ ভাগ সিদ্ধ চাল ও সাত ভাগ ধান সংগ্রহ হয়েছে। বাজারের সঙ্গে মূল্যের ব্যবধান কম থাকায় সরকারি গুদামে ধান দিতে কৃষকরা অনুৎসাহী ছিলো। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আরও এগুবে।
নদী বন্দর / সিএফ