বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সৈকতের বিশাল অংশের অবস্থান কক্সবাজার সদরে। এ সৈকতকে ভাগ করা হয়েছে ছয়টি পয়েন্টে। স্বাভাবিক সময়ে এসব পয়েন্টে প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটকের ভিড় জমে। পর্যটন মৌসুমে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই বেড়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে দুর্ঘটনা কবলিত পর্যটকদের উদ্ধারে গড়ে উঠেছে সুসংগঠিত উদ্ধারকারী বাহিনী। সমুদ্র সৈকতের একাধিক পয়েন্টে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক পানিতে নেমে আনন্দ-উল্লাস করেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপর রয়েছেন লাইফগার্ডের সদস্যরা।
বেসরকারি এনজিও সেন্টার ফর ইনজুরি ইভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে সিসেফ লাইফগার্ড। সমুদ্র সৈকতে মানুষের আনাগোনা বাড়লে দুপ্রান্তে লাল-হলুদ পতাকা টাঙিয়ে লাইফগার্ডের সদস্যরা পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদারে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেন।
দুই শিফটে নিরাপত্তার কাজ চলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। লাইফগার্ডের সদস্যরা জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ আপডেট বোর্ডে টাঙিয়ে রাখেন। পর্যটকরা তা দেখে সচেতন হতে পারে।
দায়িত্বরত সিসেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার মো. ওসমান গণি বলেন, ২০১১ সালে আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করি। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে লাইফগার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়।
তিনি জানান, শুরুতে একটি বিচ থেকে লাইফগার্ডের কাজ শুরু হলেও বর্তমানে লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে পর্যটকদের নিরাপত্তায় তারা সব সময় প্রস্তুত রয়েছেন। দুই শিফটে তিনটি পয়েন্টে মোট ২৮ জন সদস্য কাজ করছেন। এছাড়া তাদের সঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশও কাজ করছেন।
ওসমান গণি বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সমুদ্রে ডুবে যাওয়া ৩৭৫ জন পর্যটককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ২০ লাখের অধিক পর্যটকদের সচেতনমূলক বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ২৩০ পর্যটককে।’
লাইফগার্ডের এ সুপারভাইজার বলেন, ‘যে কোনো সময় যদি পর্যটকরা ডুবে যান, তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে আমরা উদ্ধার করি। সৈকতে পর্যটকদের লাল-হলুদ পতাকার সীমানার মধ্যে নিরাপদে থেকে গোসলের অনুরোধ জানানো হয়। হুইসেলের মাধ্যমে সচেতন করা হয়। তারপরও কেউ ডুবে গেলে বোট নিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রয়োজনে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। এছাড়া বর্তমানে করোনার সংক্রমণ সংক্রান্ত সচেতনতার জন্য অন্য একটি টিম কাজ করছে।’
সমুদ্রে নেমে আত্মহত্যার চেষ্টা করা এক তরুণী (২৫) উদ্ধারের অভিজ্ঞতা জানিয়ে ওসমান গণি বলেন, ‘একজন নারীকে পানিতে ডুবে যেতে দেখে বোট নিয়ে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনদিন পর জ্ঞান ফিরলে ওই নারী জানান, তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। পরে তাকে কক্সবাজার জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
ঢাকা থেকে সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক সুমাইয়া জাফরিন শিমু বলেন, ‘সৈকতে এসে পানিতে নামার আগে এখানকার জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। লাইফগার্ডের সদস্যরা সব সময় সচেতন করছেন। কতদূর পর্যন্ত গিয়ে গোসল করা যাবে, কখন পানিতে নামা যাবা, কখন যাবে না -এসব কিছু তারা বলে দেন। কেউ বেশি দূরে চলে গেলে বাঁশি বাজিয়ে অথবা মাইকিং করেও সচেতন করছেন তারা।’
নদী বন্দর / জিকে