মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজবাড়ী। সারাদেশের ১৪ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এই জেলায়। দাম ও ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের চাষ।
এবছর জেলার ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চাহিদা বেশি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত মুড়িকাটাসহ পেঁয়াজ চাষ হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার ২০৩ হেক্টর জমিতে। ধারণা করা হচ্ছে সবশেষ প্রায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হবে।
মৌসুমে মুড়িকাঁটা ও হালি এই দুই জাতের পেঁয়াজ চাষ করেন চাষিরা। এর মধ্যে আগাম জাত মুড়িকাটা পেঁয়াজ, যা এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বিস্তৃর্ণ মাঠে এখন হালি পেঁয়াজ লাগানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাব এবং বীজ, কীটনাশক, শ্রমিক মুজরিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সে অনুযায়ী এবার বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম কম পাওয়ার অভিযোগ করেছেন চাষিরা। এছাড়া ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হলে লোকসানে পড়বেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলায় কম-বেশি পেঁয়াজ চাষ হলেও জেলার কালুখালী, বালিয়াকান্দি ও পাংশা উপজেলায় পেঁয়াজের চাষ বেশি হয়। এবছর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে নিচু এলাকার ক্ষেতগুলোতে পানি জমে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও হালি পেঁয়াজের চারা। ফলে হালি পেঁয়াজ লাগাতে দেরি হয়েছে কৃষকদের।
জানা যায়, পেঁয়াজ রোপণের ৯০ দিনের মধ্যে ফলন তোলা যায়। প্রতিবিঘা জমিতে সব মিলিয়ে কৃষকের ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘায় ৫০ থেকে ৭০ মণ ফলনের আশা করছেন চাষিরা। এবছর শ্রমিক মুজরি, সেচ ও বীজের দাম বেশি হওয়ায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে চাষিদের। এছাড়া আগাম চাষ করা মুড়িকাটা পেঁয়াজেও ভালো দাম পাননি বলে অভিযোগ চাষিদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর রাজবাড়ীতে মুড়িকাটাসহ পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠে মাঠে এখনো চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন হালি পেঁয়াজের চারা রোপণে। কেউবা লাঙল দিয়ে পেঁয়াজের চারা রোপণের জন্য লাইন তৈরি করছেন। তবে বেশির ভাগ কৃষকই রোপণ শেষ করে ক্ষেত পরিচর্যার কাজ করছেন।
কৃষক আব্দুল হালিম শেখ জানান, জমি প্রস্তুত, বীজ, সার, সেচ, শ্রমিক খরচসহ প্রতিবিঘা পেঁয়াজ চাষে খরচ হবে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় ফলনের আশা করছেন ৫০-৬০ মণ। বর্তমান বাজার দর থাকলে খরচ বাদে কৃষকদের লাভ না থাকলেও লোকসান হবে না।
অন্য একজন কৃষক মজিদ মোল্লা জানান, পেঁয়াজ আরও আগে লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু মেঘ-বৃষ্টির কারণে দেরি হয়ে গেছে। তবে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম কম পেয়েছেন। তারপরও আশা করছেন খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা লাভ হবে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হলে তাদের লোকসান হবে। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি না করতে সরকারকে অনুরোধ জানান।
কৃষক রাশেদুল প্রামাণিক জানান, এবছর তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে পেঁয়াজ রোপণ একমাস দেরি হয়েছে। এখন ক্ষেতে সার, সেচ, নিড়ানীর কাজ করা হচ্ছে। পেঁয়াজ রোপণ দেরি হলেও আশা করছেন ভালো ফলন হবে। ফলন যাই হোক দেশের কৃষক বাঁচাতে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখতে হবে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম শহীদ নূর আকবর জানান, রাজবাড়ী একটি পেঁয়াজ সমৃদ্ধ এলাকা। যার সুনাম সারাদেশে রয়েছে।
এবছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ৩২ হেক্টর থাকলেও বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। যদিও ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হালি পেঁয়াজ লাগানো কিছুটা দেরি হয়েছে। তারপরও আশা করছেন চাষিরা ভালো ফলন পাবেন।
তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাব কাটিয়ে উঠেছেন চাষিরা। যেসব চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
নদী বন্দর / বিএফ