রাজশাহীতে আম বাগানের ভেতরে দৃষ্টিনন্দন টিউলিপ বাগান করে তাক লাগিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা হাসান আল সাদী পলাশ। দৃষ্টিনন্দন এ বাগান দেখতেও প্রতিদিন ছুটে আসছেন দূর-দূরান্তের মানুষ। তবে টিউলিপ দেখতে প্রত্যেককে গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা।
রাজশাহী নগরী থেকে বাগানের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা-কাঁকনহাট সড়ক হয়ে মিনিট বিশেকের পথ গেলেই দৃষ্টিনন্দন টিউলিপের দেখা মিলবে ‘ডিমার্স গার্ডেন’ এ।
বাগানের মালিক পলাশ জানান, বড় পরিসরে ফুলের বাগান করতে গত এক বছর ধরে জায়গা খুঁজি। কয়েকটি জায়গাও পেয়েছিলাম। কিন্তু লিজ নিতে বিশাল অঙ্কের অর্থ চাওয়ায় থমকে যেতে হয়। পরে খালাতো ভাই জুবেরি হাসানের আমের বাগানেই পরীক্ষামূলকভাবে গড়ে তুলি ফুলের বাগান।
‘১৩ কাঠার আম বাগানে প্রথমার্ধে তিন হাজার গাদা, এক হাজার টিউলিপ, এক হাজার সেলুসিয়া, এক হাজার সার্বিভা, দশ হাজার পিটুলিয়া, এক হাজার গ্লাডিওয়াস, এক হাজর পেনজি, পাঁচশ ভারবিনা, এক হাজার গেজেনিয়া, পাঁচশ চায়না গাঁদা, চার হাজার ড্রিপ চন্দ্র মল্লিকা, পাঁচশ ক্লক্স ফ্লাউয়ার, কসমস তিনশ এবং পরবর্তীতে আরও চারশ গাঁদা ফুলের চারা রোপণ করে আম বাগানকে ফুলে ফুলে রঙ্গিন ও সুরভিত করা হয়।’
সরেজমিনে দেখা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে ফুলের টানে প্রতিদিনই বাগানে আসছেন ফুলপ্রেমীরা। তাদের অধিকাংশই ছুটছেন টিউলিপ দেখতে।
দেখা গেছে, প্রধান ফটক থেকে শুরু করে পুরো বাগানজুড়েই কেবল ফুল আর ফুল। সারি সারি আমগাছের ডালেও টবে করে ঝুোণো হয়েছে বাহারি ফুলগাছ। গাছের নিচে-ফাঁকা জায়গায়ও বিভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো রয়েছে ফুলগাছ।
বাগানের ভেতরে রয়েছে একটি ছোট পুকুর। পুকুরপাড়, এমনকি পুকুরে ভেসে থাকা ছোট নৌকাতেও থরে থরে সাজানো রয়েছে ফুলগাছ।
পলাশ বলেন, দর্শনার্থীরা সবার আগেই ছুটে যাচ্ছেন টিউলিপের কাছে। কারণ, দেশে টিউলিপের দেখা মেলে না।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ১৮ বছর ধরে আমার খালু আফজাল হোসেন এখানে আমের বাগান করেন। এটি প্রায় পরিত্যাক্ত ও অগোছালো ছিল। আমের মৌসুমে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকে আম নিতে আসতেন। কিন্তু পরবর্তীতে খালাতো ভাই এবং আমি আম বাগানের মধ্যে ফুলগাছ দিয়ে সাজানোর পরিকল্পনা করি। মূলত যারা স্বপ্ন দেখতে পচ্ছন্দ করেন এবং ফুল ভালোবাসেন তাদের জন্য বাগানের নামকরণ করা হয় ‘ড্রিমার্স গার্ডেন’। যার নাম প্রথমে ছিল ‘আফজাল গার্ডেন’।
২০২০ সালের দিকে দেশে প্রথম টিউলিপের বাগান দেখি গাজীপুরের শ্রীপুরে। পরে চিন্তা করি রাজশাহীতেও টিউলিপ লাগানো যায়। কিন্তু প্রত্যাশিত জায়গা না পাওয়ায় বাগানের ভেতরেই টিউলিপের বাগান করি বলে জানান পলাশ।
‘অপরাজিতা’ এর সত্ত্বাধিকারি সাঈদা রায়হানা একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। ভালোবাসেন ফুল। সেই ভালোবাসা থেকেই মেয়ে সারাকে নিয়ে ছুটে আসেন টিউলিপ দেখতে।
তিনি বলেন, ফুলের প্রতি আমার অন্যরকম টান। বান্ধবীর কাছে যখনই শুনেছি রাজশাহীতে টিউলিপের বাগান আছে। তখনই সিদ্ধান্ত নেয় এটি দেখার। এ কারণে বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) স্বপরিবারে ডিমার্স গার্ডেনে টিউলিপ দেখতে এসেছি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) উত্তম কুমার কবিরাজ বলেন, রাজশাহীর বাঘা ও পবায় প্রায় ১৩ বিঘা জমিতে ফুলের চাষ হয়। এর মধ্যে এবছর পবায় টিউলিপ লাগানো হয়েছে। তারা বেশ সফলও হয়েছে।
নদী বন্দর / পিকে