চারদিন ধরে বেনাপোল বন্দরে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। পেট্রাপোলসহ কলকাতায় একাধিক বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না বিষয়টি নিয়ে। বুধবার কলকাতায় শুল্ক দফতরের সঙ্গে ক্লিয়ারিং এজেন্টদের বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি। ফলে দুই দেশের বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক।
আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাস, পণ্য ওঠানামা ও শুল্কভবনের সব কাজকর্মসহ দুই দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্লিয়ারিং এজেন্টরা পেট্রাপোলের বাকি সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন এই আন্দোলন চলবে নাকি কর্মবিরতি থেকে সরে দাঁড়িয়ে ফের চালু করবেন আমদানি-রপ্তানির কাজ। এদিনের বৈঠকের পর কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা আজই জানিয়ে দেওয়া হবে শুল্ক দফতরকেও।
পেট্রাপোল এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, টানা চার দিনে পড়লো আন্দোলন। পেট্রাপোল বন্দর বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছে সীমান্ত বাণিজ্য। আমরা চাই দ্রুত এর সমাধান করে ফের কাজের গতি আসুক বন্দরে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকের ফল কী হয় তা দেখার জন্য মুখিয়ে আছে আন্দোলনকারীরা।
বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্যবাহী ট্রাক রাখার জায়গায় চালক ও খালাসিদের ঢুকতে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
কিছুদিন আগেই স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনো ট্রাককে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বন্দরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তারপর থেকেই বৈধ কাগজ ছাড়া ট্রাকচালক ও খালাসিদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
যদিও আমদানি-রপ্তানির কাজে জড়িতদের দাবি, করোনা আবহে অনেক গাড়ির কাগজ পুনর্নবায়ন করা হয়নি। তার মাঝেই হঠাৎ করে এই নতুন নিয়মের কারণে প্রচুর পণ্যবাহী ট্রাক আটকে যাবে বলেও আশঙ্কা তাদের। তাই আগামী ছয় মাস গাড়ির কাগজ বৈধ করার সময় চেয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
তাদের আরও দাবি, ততদিন পর্যন্ত যেন তাদের ট্রাক আটকানো না হয়। দাবি না মেনে নেওয়া পর্যন্ত তারা এভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
ভারতীয় বিএসএফ ও পেট্রাপোল ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, পেট্রাপোল এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন, সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ নব ট্রাক মালিক সমিতি, বনগাঁ মোটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সীমান্ত পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনসহ আটটি সংগঠন সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেয়।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বুধবার শুল্ক দফতরের সঙ্গে কলকাতায় দীর্ঘ সময় ধরে চলা বৈঠকে ক্লিয়ারিং এজেন্টরা তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শুল্ক দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তাদের দাবি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তবে কোনো সবুজ সংকেত এখনও পর্যন্ত মেলেনি বা সেখান থেকে কোনো সমাধান সূত্র পাওয়া যায়নি। আমদানি-রপ্তানি কাজে বন্দর অভ্যন্তরে প্রবেশসহ নানা হয়রানি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
এদিকে বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ধর্মঘটের কারণে বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের মতো বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। তবে তারা বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমদানি-রপ্তানি রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাস, পণ্য ওঠানামা, শুল্কভবনের কাজকর্ম ও যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে।
নদী বন্দর / জিকে