হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাই স্পিড ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়েছে। ফলে চলতি মাসের (মে) শুরু থেকেই বিমানবন্দরে চালু হয়েছে ২৪ ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা। ইমিগ্রেশন, বোর্ডিংসহ সব জায়গায় যাত্রীদের ভোগান্তি ও হয়রানি রয়েছে আগের মতোই। তবে পার্কিংসহ কিছু সুবিধা আগের চেয়ে বেড়েছে এয়ারলাইন্সগুলোর।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে বিমানবন্দরে রাতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করেছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
তখন সংস্থাটি জানিয়েছিল, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজের অংশ হিসেবে আলাদা দুটি হাই স্পিড কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ ও লাইটিংয়ের জন্য প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ থাকবে। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১০ জুন পর্যন্ত তা বন্ধ থাকার কথা। যেদিন থেকে রাতে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ হয়, তখন থেকেই বিমানবন্দরে যাত্রী ভোগান্তি বাড়তে থাকে। পরে নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্মাণকাজ শেষ করে বেবিচক।
তবে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো জানিয়েছে, হাই স্পিড ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণকাজ শেষ হলেও তারা এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে বিমানবন্দরটি ব্যবহার করতে পারছে না। কারণ আগামী ১০ জুন পর্যন্ত কোনো এয়ারলাইন্সের রাত ১২টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত ফ্লাইট শিডিউল নেই। দিনের ফ্লাইটের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছেন তারা। তবে হাই স্পিড ট্যাক্সিওয়ের কাজ শেষ হওয়ায় প্লেন পার্কিংসহ অন্যান্য কাজে সুবিধা হয়েছে।
বেবিচক সূত্র জানায়, আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ২৭টি এয়ারলাইন্সের ৯০টির বেশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা হতো। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ৯৫-১০০টি ফ্লাইট পরিচালনা করতো তিনটি এয়ারলাইন্স- বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার। কিন্তু হাই স্পিড ট্যাক্সিওয়ের নির্মাণকাজ শুরুর পর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নেমে আসে ৭০টিতে। আর অভ্যন্তরীণ কিছু ফ্লাইট কমে যায়।
এখন হাই স্পিড ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ শেষ হলেও ফ্লাইটের সংখ্যা তেমন একটা বাড়েনি। যদিও দিনের সব ফ্লাইট পরিচালনা করায় শাহজালাল বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক টার্মিনালে যাত্রীর চাপ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
রোববার (৮ মে) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দরে টার্মিনালগুলোর সামনে বিদেশফেরত ও বিদেশগামীদের উপচেপড়া ভিড়। তাদের স্বাগত ও বিদায় দিতে সেখানে পরিবারের সদস্যরা ভিড় জমিয়েছেন। কেউ আপনজনকে বিদায় দিতে গিয়ে কাঁদছেন, আবার কেউ বিদেশফেরতদের নিয়ে আনন্দ করছেন।
এমন চারজন বিদেশফেরত ও বিদেশগামীর সঙ্গে কথা বলে। তারা প্রত্যেকেই বিমানবন্দরে মানুষের চাপ ও ট্রলি না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।
সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের যাত্রী জাফর আহমেদ বলেন, আট বছর ধরে সৌদি থাকি। এর মধ্যে অনেকবার দেশে আসা-যাওয়া করেছি। কিন্তু বিমানবন্দরে এত যাত্রীর চাপ দেখিনি। মালামাল বহন করার জন্য ট্রলি নিয়েও টানাটানি লেগে যায়।
বিকেল ৩টার দিকে লন্ডনের একটি ফ্লাইট থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন বনশ্রীর বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন।
বিমানবন্দরে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট দিনে পরিচালনা করায় ইমিগ্রেশনে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পরে লাগেজ বহন করার জন্য ট্রলি পেতে সমস্যা হয়েছে। এখন এটা যে একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, তার কোনো আলামতই নেই। দেখলে মনে হয়, কোনো রেলস্টেশনে আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, এই বিমানবন্দর দিয়ে দিনে ২০ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করে। বাড়তি যাত্রীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এছাড়া স্থান স্বল্পতা, বোর্ডিং, বাস স্বল্পতা, ইমিগ্রেশন ও হেলথ ডেস্কে লোকবলের অভাবে ধাপে ধাপে ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। সঠিক সময়ে নির্ধারিত গন্তব্যে ছেড়ে যেতে পারছে না অনেক ফ্লাইট। এমন বিশৃঙ্খল চিত্র ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা করে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি বাংলাদেশ (সিএএবি)।
সিএএবির পরিচালক (এটি) এ কে এম ফায়জুল হক বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই বিমানবন্দরে হাই স্পিড ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তাই ১ মে থেকে ২৪ ঘণ্টাই এই বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু করতে নোটাম (নোটিশ ফর এয়ারম্যান) জারি করা হয়। তবে অধিকাংশ এয়ারলাইন্স আগামী ১০ জুন পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছে। ফলে এখনো রাত ১২টার পর তেমন ফ্লাইট ওঠানামা করে না। আগামী ১০ জুনের পর আগের মতো ফ্লাইট ওঠানামা করবে। তখন যাত্রী ভোগান্তি বা হয়রানি হবে না।
নদী বন্দর/এসএইচ