দেশের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েক দিনে ঝড়-বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বগুড়ার শেরপুরে অন্তত এক হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে। নওগাঁর বদলগাছীতে কেটে রাখা ধান ভিজে পচে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় পানিতে নিমজ্জিত ধান কাটতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা দিয়ে শ্রমিক আনলেও লোকসানের আশঙ্কায় কৃষক।
শেরপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। শুরু থেকে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকলেও ফসল ঘরে তোলার সময় আবহাওয়া অনুকূলে নেই। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। বিশেষ করে অশনির প্রভাবে এই উপজেলার ওপর দিয়ে ঝড়-বৃষ্টি বয়ে গেছে। এতে এক হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তবে কৃষকরা বলছেন, ঝড়-বৃষ্টিতে উপজেলার বেশির ভাগ জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এমনকি ক্ষেতে জমে থাকা পানিতে ধানের শীষ ডুবে পচে যাচ্ছে। শ্রমিকসংকটে জমির পাকা ধান কাটতেও পারছেন না কৃষক। চোখের সামনেই পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, এমনিতেই বৈরী আবহাওয়া, তারপর শ্রমিকসংকট। সেই সঙ্গে ধানের বর্তমান বাজারদর কৃষকের কোমর ভেঙে দিচ্ছে। এই ভাঙা কোমর নিয়ে আগামী মৌসুমের ফসল কী করে চাষ করবেন, এমন ভাবনায় এখন থেকেই শঙ্কিত তাঁরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, মৌসুমের শেষ সময়ে এসে আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় যেসব জমির ধান ৮০ শতাংশ পেকে গেছে তা দ্রুত কেটে ঘরে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষকরা ধান কাটছেন। এরই মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছেন তাঁরা।
ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে মৌসুমি ফল আম, লিচু, কলা, ভুট্টা, ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসান আহম্মেদ জেমস মল্লিক বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে ঝড় শুরু হয়। ঝড়ে পাঁচ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ও গাছপালা ভেঙে গেছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলায় ফসলের মাঠগুলোতে পানি জমে থাকায় পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে। অথচ এখনো ৫৫ শতাংশ বোরো ধান কৃষকের জমিতে, যার বেশির ভাগই কাটার উপযোগী।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে একটি পৌরসভাসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১৯ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকরা জানান, শেষ সময়ে ঝড়-বৃষ্টিতে জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি জমে যাওয়া এক বিঘা জমির ধান কাটার জন্য শ্রমিকদের পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। কেটে রাখা ধানে পানি জমে আছে। ধানের রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আদনান বাবু জানান, ঝড়-বৃষ্টিতে ধানগাছ পড়ে গিয়ে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। যত দ্রুত সম্ভব পাকা ধান কাটতে হবে।
নওগাঁর বদলগাছীতে বৃষ্টির কারণে ধান কেটে মজুরি দিয়ে কিছুই থাকছে না কৃষকের। বিঘাপ্রতি ধান কাটায় ৮-৯ হাজার টাকা শ্রমিকের মজুরি দিয়ে কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তার ওপর ঘরে ও মাঠে হাজার হাজার মণ ভিজা বোরো ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক।
কৃষকরা জানান, ঈদের আগে যাঁরা ধান কেটেছেন তাঁদের কাটা ও মাড়াই খরচ কম হয়েছে। ঈদের দিন থেকেই শুরু হয় প্রতিদিন বৃষ্টি। চলতি মৌসুমে ঝড়-বৃষ্টিতে আগেই মাঠের পর মাঠ ধান জমিতে শুয়ে পড়েছে। এসব ধানে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় অনেক জমির ধানে পচন ধরেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান আলী জানান, এই উপজেলায় ১২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। শ্রমিকসংকট মোকাবেলায় কৃষককে কৃষিযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অতিবৃষ্টিতে নিচু এলাকায় পানি বেড়েছে। ছাইলাকালি, কেওলার হাওরসহ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। কাটার বাকি থাকা প্রায় ৬০০ হেক্টর বোরো ধান ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আরো পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ভাটি এলাকা ইসলামপুর ও আদমপুরেও এখনো বৃষ্টির পানি রয়েছে।
বৃষ্টিপাতে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা দ্রুত ধান কেটে ফেলছেন। পতনউষারের ধোপাটিলা গ্রামের কৃষক জব্বার মিয়া বলেন, হাওরে তিনি এক বিঘা জমি চাষ করেছেন। পাকা ধান কাটার বাকি ছিল, তা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান বলেন, বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে বোরো ধানের কিছু এলাকা আংশিক নিমজ্জিত হলেও দ্রুত পানি নেমে যাচ্ছে। তবে কৃষকরাও ধান কেটে ঘরে তুলে নিচ্ছেন।
সুনামগঞ্জের প্রধান নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার গজারিয়া রাবার ড্যাম দিয়ে পানি প্রবেশ করায় খরচার হাওরের উঁচু অংশের হাজার হেক্টর জমির ধান ঝুঁকিতে পড়েছে। শুক্রবার রাতে জরুরি সভা করে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ কৃষি বিভাগকে দ্রুত ধান কাটার নির্দেশনা দিয়েছে। গতকাল দিনভর নিমজ্জিত বোরো ধান কাটতে দেখা গেছে কৃষকদের।
নদী বন্দর/এসএম