মধ্য জুন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা আর পদ্মা-গঙ্গায় বন্যার আশঙ্কা নেই। কিন্তু তিস্তা, আপার মেঘনা অববাহিকা আর উপকূলীয় অঞ্চলের কিছু স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টির কারণে কোথাও নদ-নদীর পানি দ্রুত বিপৎসীমা পার হতে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) এক বুলেটিনে এমন পূর্বাভাসই দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার এই সংস্থার এক বুলেটিনে বলা হয়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কিছু স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এতে উত্তরের নদী তিস্তা-ধরলা আর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা বা সুরমা, কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, যদুকাটা, সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংস, মনু ও খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে সাময়িক বন্যা তৈরি হতে পারে।
এছাড়া এ সংস্থার এক বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশের তিন অঞ্চল বন্যা কবলিত হতে পারে। এগুলো হলো-উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, সাধারণত ভারতের আসাম ও মেঘালয়সহ পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমবঙ্গে ভারি বৃষ্টি হলে তার প্রভাবে বাংলাদেশে পড়ে। কেননা, ওই পানি উল্লিখিত নদ-নদী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরে যায়। যে কারণে বিভিন্ন মেয়াদি বন্যার কবলে পড়তে হয়।
ইতোমধ্যে এপ্রিলের শেষদিকে ও মে মাসের মাঝামাঝি আকস্মিক বন্যায় কবলিত হয় সিলেট ও সুনামগঞ্জের অন্তত ১৪টি উপজেলা।
অপরদিকে শুক্রবার দেওয়া বিএমডির এক মাসের স্বল্পমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে জুনে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। পাশাপাশি দেশের কোথাও কোথাও মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে একাধিক লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তবে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। কেননা, বর্ষায় জলীয় বাষ্পের দাপট বেশি থাকে। এ পরিস্থিতি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সহায়ক নয়। তবে এর থেকে যে ভারি বৃষ্টি হবে, তা দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
সাধারণত জুনের প্রথম সপ্তাহে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপকূলে আসে। তা সারা দেশে বিস্তার লাভ করতে মধ্য জুন লেগে যায়। কিন্তু এবারে উপকূলে আগাম আগমন ঘটেছে এই বায়ুর। ৩১ মে কক্সবাজার দিয়ে এটি প্রবেশ করে। ওইদিন এর অবস্থান ছিল কক্সবাজারসহ মায়ানমারের আরাকান রাজ্য বরাবর। সেদিন কক্সবাজারে ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আর কক্সবাজারের দ্বীপ কুতুবদিয়ায় ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এটি ধীরে ধীরে সারা দেশে বিস্তার লাভ করবে। এর প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ৩-৪ দিন এ বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে উপকূলীয় ও উত্তরাঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হতে পারে।
বিএমডির আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মৌসুমি বায়ু যখন দেশে প্রবেশ করে তখন তা বর্ষা মৌসুম নিয়ে আসে। এর ফলে প্রকৃতির জন্য সজীবতা নিয়ে আসে। বিদায় নিতে আগস্ট-সেপ্টেম্বর হয়ে যায়।
এদিকে বিএমডির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এ মাসে গড়ে দেশে ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। হয়েছে ৩০৫ মিলিমিটার। মূলত পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে ওই বৃষ্টি হয়েছে। তবে বুধবার থেকে যে বৃষ্টি হচ্ছে, তা মূলত মৌসুমি বায়ুর কারণে।
নদী বন্দর/এসএফ