ঢাকা থেকে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ের অপারেটর নিয়োগের প্রস্তাব ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল বুধবার তা উত্থাপনের কথা রয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে অর্থ বিভাগের অনুমোদিত হার অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা টোল দিতে হবে মাঝারি আকারের গাড়িকে। তবে টোল কার্যকরের আগে আরেক দফা হার বৃদ্ধির চিন্তা করা হয়েছিল। পরে পদ্মা সেতুর উচ্চ টোল ও জনগণের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে আপাতত আগের হারেই টোল কার্যকরের ব্যাপারে একমত হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
সড়ক মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান অবস্থান হচ্ছে-৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েতে মাঝারি ট্রাকে ৫৫০ টাকা, বাসে ৪৯৫ টাকা, মাইক্রোবাস, জিপ ও পিকআপে ২২০ টাকা এবং প্রাইভেট কারে ১৩৮ টাকা টোল দিতে হবে। আর ৫৬ টাকা টোল লাগবে মোটরসাইকেলে।
গতকাল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব আলোচনা হয়। বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী বলা হয়, আগামী ১ জুলাই থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় করার চিন্তা রয়েছে। তবে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মনোভাব জেনে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
গতকাল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের নবনিযুক্ত সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর একদিন অফিস করেছি। বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করছি। টোল হারের বিষয় নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ নেব ও পরবর্তী করণীয় তখন বলা যাবে’।
গতকাল সড়ক সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা সূত্র জানিয়েছে, একই সময়ে এক্সপ্রেসওয়েতে বড় অঙ্কের টোল আরোপ হলে, পরিবহন ব্যয় তথা জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে। তাই আপাতত টোল না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। টোল পুনঃনির্ধারণে আজ মঙ্গলবার অংশীজনদের সঙ্গে সচিবের সভাপতিত্বে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তা স্থগিত করা হয়েছে। তার আগে গত ২৪ মে এ সংক্রান্ত বৈঠক ছিল। সেটিও স্থগিত করা হয়।
পদ্মা সেতুকে রাজধানী ও দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনকে (কেইসি) অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব গেছে। কেইসি ভ্যাট ট্যাক্সসহ আগামী পাঁচ বছরে ৭১৫ কোটি টাকা নেবে সরকারের কাছ থেকে।
এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা জোন) সবুজ উদ্দিন খান বলেছেন, এক্সপ্রেসওয়ে পুরোপুরি প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত হবে। গাড়ি যে পয়েন্ট দিয়ে বের হবে- তার আগে অতিক্রম করা দূরত্বে টোল দেবে। এ মাস পর্যন্ত তিনটি সেতুতে (পোস্তগোলা, ধলেশ্বরী ও আড়িয়াল খাঁ সেতু) টোল দিতে হবে। এর পর এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু হলে এ তিন সেতুতে আলাদা করে টোল নেওয়া হবে না। প্রাথমিক পর্যায়ে ম্যানুয়ালি টোল আদায় করা হবে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যেতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রাবাড়ী-মাওয়া অংশে কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুর, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে এক্সিট এন্ট্রি পয়েন্ট থাকবে। এ দুই এলাকা দিয়ে যানবাহন এক্সপ্রেসওয়েতে ঢুকতে ও বের হতে পারবে। পদ্মার সেতু ওপারে এক্সিট ও এন্ট্রি পয়েন্ট থাকবে পুলিয়াবাজার ও মালিগ্রামে। এ চার পয়েন্টে এখনো টোল আদায় স্থাপনা নির্মিত হয়নি।
সড়ক পরিবহন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, টোল নীতিমালা অনুযায়ী মাঝারি ট্রাককে ভিত্তি ধরে টোল নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে মাঝারি ট্রাকে কিলোমিটারের ২০ টাকা ১৮ পয়সা টোল নির্ধারণ করেছিল কমিটি। কিন্তু পদ্মা সেতুর উচ্চ টোল ও জনগণের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে ১০ টাকা টোল আরোপের প্রস্তাব করা হয়। যা অনুমোদন করে অর্থ বিভাগ। টোল হার পুনঃনির্ধারণ, অর্থ বিভাগ তথা সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদনও সময় সাপেক্ষ। তাই গত বছরের অনুমোদিত হারে আপাতত টোল আদায় হবে। বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে আসতে পারে।
টোল নীতিমালা অনুযায়ী, এক্সপ্রেসওয়েতে বড় বাসের টোল কিলোমিটারে ১৮ টাকা ১৬ পয়সা। তবে অনুমোদিত টোল তার অর্ধেক। ফলে ৫৫ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের টোল ৪৯৫ টাকা। মাঝারি ট্রাকের জন্য দুই লেনের মহাসড়কে কিলোমিটারে দুই টাকা এবং ৭৫০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে সেতুতে ৪০০ টাকা টোল ধরা হয়েছে।
নদী বন্দর/এসএফ