ভারতে গম রপ্তানিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের কারণে বাংলাদেশে আসতে পারছে না মালবাহী ১২টি ট্রেন। এসব ট্রেনের মোট ৫০৪টি ওয়াগনে প্রায় ২ হাজার ৪০০ টন গম রয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগ দেশে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করায় বাংলাদেশে আসতে ট্রেনগুলোর বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন। সে কারণেই কয়েকদিন ধরে আটকে রয়েছে সেগুলো। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, যেসব রপ্তানিকারক এসব গমের চালান বাংলাদেশে পাঠাতে চান, তারা ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) অধীন আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষগুলোর কাছ থেকে নিবন্ধন সনদ (আরসি) পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরুরি পণ্যবোঝাই আটকেপড়া ওয়াগনগুলো নিয়ে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে ভারতীয় রেল মন্ত্রণালয়। এ ধরনের ওয়াগনগুলোতে সাধারণত সারসহ অন্যান্য জিনিসও পরিবহন করা হয়।
ভারতীয় রেল মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, ট্রেন চলাচল শুরুর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে জোর প্রচেষ্টা চলছে, যেন অন্য মালামাল বহনের জন্য খালি ওয়াগনগুলো দ্রুত ফিরিয়ে আনা যায়।
ভারত সরকারের সূত্র বলেছে, জালিয়াতির আশঙ্কা দূর করতে পরামর্শক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সব ঋণপত্র (এলসি) যাচাই করা হচ্ছে এবং তারপরে আরসি ইস্যু করা হবে।
গত ১৩ মে বাধাহীন গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পরপরই যোগ্য রপ্তানিকারকদের জন্য আরসি ইস্যু করার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষগুলোকে কঠোরতা অনুসরণের নির্দেশ দেয় ডিজিএফটি। তবে কিছু অসাধু রপ্তানিকারক আরসি’র জন্য ১৩ মে বা তার আগে ইস্যু করার তারিখসহ ভুয়া এলসি জমা দিচ্ছে, এমন খবর পাওয়ার পর গত ৩০ মে নতুন নির্দেশিকা জারি করে ডিজিএফটি।
ওই নির্দেশিকায় বলা হয়, প্রয়োজনে সব এলসি সশরীরে যাচাই করবে আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ, তা সে এরই মধ্যে অনুমোদিত হোক বা প্রক্রিয়াধীন। দরকার হলে এই কাজে কোনো পেশাদার সংস্থার সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। সশরীরে যাচাইয়ের সময় প্রাপক ব্যাংকের বৈধতা বা অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে, গত ২ জুন কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, গম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না শত শত ভারতীয় ট্রাক। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থলবন্দরে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আনুমানিক চার লাখ টন গম নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেগুলো। ভারতের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গমবোঝাই ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃষ্টির কারণে গমগুলো পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। সেটি হলে কোটি কোটি রুপি লোকসান গুনতে হবে তাদের।
গত ১৩ মে অনেকটা হঠাৎ করেই গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি)। তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হওয়া ওই নিষেধাজ্ঞায় বৈশ্বিক গম সরবরাহ ব্যবস্থার সংকট আরও তীব্র হয়।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে ডিজিএফটি জানায়, ১৩ মে’র আগে গমের জন্য যেসব ঋণপপত্র (এলসি) ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলোর চালান পাঠানো যাবে। তাছাড়া প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ভারতের গম রপ্তানি বন্ধ হবে না।
পরে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনও নিশ্চিত করে, বাংলাদেশে ভারতের গম রপ্তানিতে কোনো বাধা নেই। পাশাপাশি, অন্য যেসব দেশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ভারতীয় গম আমদানি করতে ইচ্ছুক, সেসব দেশের সরকারের অনুরোধ সাপেক্ষেও গম রপ্তানি চলবে।
নদী বন্দর/সিএস