ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বাজেট মানেই লুটপাট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের পর এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে দলটির নেতারা এই মন্তব্য করেন।
বিকেলে কাফরুলে ওয়ার্ড সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই লুটেরা, দুর্বৃত্ত সরকারের বাজেট মানেই টাকা লুট। আরো টাকা লুট করা।
তাই বাজেট নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। আমরা এর আগেও বাজেট নিয়ে কথা বলেছি, প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। এইবার কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে চাই না। কারণ আমরা কোনো বাজেটের প্রতিক্রিয়া দেব না।
ফখরুল প্রশ্ন রেখে বলেন, এটা কার বাজেট? কারা এই বাজেট করছে? যারা আজকে বাজেট ঘোষণা করছে তারা তো জনগণের প্রতিনিধি নয়। বাজেট ঘোষণা করার কোনো অধিকার তো তাদের নেই। সরকার বাজেট তৈরি করছেন নিজেদের লুটপাটের জন্য। ভবিষ্যতে কিভাবে আরো লুটপাট করতে তারা এই হিসাব করে। তাই এবারের বাজেট আমাদের কাছে কোনো গুরুত্ব পায়নি।
গুলশানের বাসায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ বাস্তবতা বর্জিত একটি বাজেট।
তিনি বলেন, দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের কভিড পরবর্তী চরম মূল্যস্ফীতিজনিত দুঃসহ জীবনযাপন ও দৈনন্দিন সংগ্রামের বিষয়টি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে এমন একটি বাজেট উপস্থাপন করেছে যা দেশের মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হয়েছে। অবাক হবার কিছু নেই, এতে করে লাভবান হবে সরকার সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী। অন্যদিকে নতুন বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরো চরম অবস্থায় পতিত হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
তিনি বলেন, এই ঢাউস বাজেটে অবাধ মুদ্রা সরবরাহের বিষয়টি সরাসরি দেখা যায় না। কেউ জানে না, বাংলাদেশ ব্যাংক কত নতুন নতুন নোট ছাপিয়ে বাজার ছয়লাব করে দিচ্ছে, যার ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর অর্থনীতিতে জনগণের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ইনফ্লেশন সরকারি হিসেবে ৬ শতাংশের কিছু ওপরে কিন্তু বাস্তবে সেটা ১২ শতাংশ, অর্থাৎ সরকারি হিসেবের দ্বিগুন। বর্তমান বছরের বাজেটের ফলে এই পরিস্থিতি আরো নাজুক আকার ধারণ করবে।
তিনি আরো বলেন, ডলারের বিপরীতে স্বল্পতম সময়ে টাকার মারাত্মক অবমূল্যায়ন ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। এই বাজেটে তার কোনো সমাধান নেই।
ড. মঈন খান বলেন, বাজেট ঘাটতি ৩৬ শতাংশ অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশেরও বেশী। ফলে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের বিষয়টি নাই বা ব্যখ্যা করলাম। এর চাপও কিন্তু দরিদ্র জনগনের ওপরেই পড়বে। কর্পোরেট ট্যাক্স কমেছে, কিন্ত ট্যাক্স ফ্রি তিন লক্ষ টাকার সীমা এক টাকাও বাড়ে নি-এই নিয়ে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
দরিদ্র দেশের একটি বাজেটের মৌলিক দিক হলো উন্নয়ন বাজেট বনাম রাজস্ব বাজেটের অনূপাত। আমরা দেখছি, একদিকে উন্নয়ন বাজেটের সিংহ ভাগ নিয়েছে ভৌত অবকাঠামোর মেগা প্রজেক্টগুলো। সাথে সাথে আশংকা হচ্ছে মেগা দুর্নীতির। কাজেই অধিকতর ব্যাখ্যায় না যাওয়াই হয়তো উত্তম। পাশাপাশি অনুন্নয়ন ব্যয় অথবা এখন যাকে অন্য নামে বলা হয় পরিচালনা ব্যয়, তার পরিমাণ ৪ লক্ষ কোটির ওপর। রাজনৈতিক সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রশাসন ও সাপোর্ট সিস্টেমকে খুশি রাখতে হবে তো।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বাজেটে বিরাট অংকের ভর্তুকি। লক্ষ কোটি টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলো কার পকেটে যায়? আমরা অতীতে দেখেছি, কিভাবে একই টেলিফোন নাম্বারে কতবার প্রণোদনা যায়, কার কাছে যায়! এগুলো এখন মানুষের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন আসবে, বিগত দুই বছরে যে লক্ষ হাজার কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল সে টাকা গেল কই? তার মধ্যে একটি টাকাও কি পরিশোধ করা হয়েছে? জনগণ জানতে চায়।
শুনি, রপ্তানি না কি হু হু করে বাড়ছে। তাহলে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ হচ্ছে না কেন? কারা কারা এই প্রণোদনা পেয়েছে ও কি পরিমাণ পরিশোধ করেছে, তার ওপরে সরকারের শ্বেতপত্র চায় জনগণ। এ বাজেট জনগণের জন্য নয়, এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ একটি ‘বাস্তবতা বর্জিত’ বাজেট, কেবল সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।
নদী বন্দর/এসএফ