পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে মোংলা বন্দরের দূরত্ব কমে যাতায়াত সহজ হবে। ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের চাপ বাড়বে এ বন্দরে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করে সেই সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে মোংলা বন্দরে। তবে পদ্মা সেতুর পুরোপুরি সুফল ভোগে সেতু থেকে বন্দর পর্যন্ত ফোর-সিক্স লেনের রাস্তা, বন্দর এলাকায় ফাইভ-স্টার মানের হোটেল, খানজাহান আলী বিমানবন্দর চালু ও বন্দর জেটিতে নাব্য বৃদ্ধি করার দাবি ব্যবসায়ীদের।
বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসায়িক সুবিধার্থে তারা মোংলা বন্দরের দিকে ঝুঁকবেন। কিন্তু এখনো অনেকভাবেই তাদের ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে। আর তা হচ্ছে সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বন্দর জেটিতে নাব্যসংকট।
মোংলা বন্দর বার্থ-শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে মোংলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। যার ফলে ঢাকাসহ ঢাকার আশপাশে যে শিল্প কলকারখানা রয়েছে সেসব কারখানার পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানিরপ্তানি শুরু হবে। এ কারণে এই বন্দরের কর্মব্যস্ততা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো বন্দর জেটিতে নাব্য বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমানে বন্দর জেটিতে ৭ মিটার নাব্য আছে। প্রয়োজন সাড়ে ৯ মিটারের নাব্য। তাই দ্রুত নাব্য ন্যূনতম ৮ মিটারে উন্নত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, যে কোনো বিদেশি জাহাজ মালিক যখন এ বন্দরে জাহাজ পাঠান তখন তার একটা লাভ-লোকসানের হিসাব করেন। সেক্ষেত্রে এখান থেকে জাহাজে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হবে তাতে তারা লাভবান হবেন না। অনাগ্রহ প্রকাশ করবেন। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হবে তার জন্য নাব্য বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প নেই।
মোংলা বন্দর বার্থ-শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সহসাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জেসান ভুট্টো বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর এ অঞ্চলে যে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সরকারের ওপরের মহলে দৃষ্টি রেখে বলব, প্রথমত ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত দুই লেনের রাস্তা। ব্যবসায়ীরা যখন এই বন্দরে ছুটে আসবেন তখনই সড়কে এমন যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এটাকে ফোর-সিক্স লেনে উন্নীত করতে হবে।
কারণ সেতু চালুর পর সড়কে গাড়ির চাপ বাড়বে। তাই টেকসই রোড ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করতে হবে। দ্বিতীয়ত এখানে ইপিজেড, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য এখানে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি পাঁচতারা মানের হোটেল করতে হবে। তবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের এসব দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, সব কিছুই যথা সময়ের মধ্যে করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে এই বন্দরে অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আরেকটা বড় প্রকল্প মহাসড়ক ফোর-সিক্স লেনে উন্নীত করার কাজ বাস্তবায়নাধীন। বন্দরের আউটারবার ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে। ইনারবার ড্রেজিংয়ের কাজও শুরু হয়েছে। বন্দরে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে এর সুফল পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কোনো প্রকল্পই পিছিয়ে নেই, সবকিছুই ঠিক সময়ের মধ্যে করা হবে বলেও জানান তিনি।
নদী বন্দর/এসএফ