বাগেরহাটের মোংলায় ডেকে নিয়ে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে পিয়াঙ্কা বাইন নামের এক ভারতীয় নারীর বিরুদ্ধে। এ সময় নগদ টাকা ও মোবাইল খুইয়েছেন ওই ব্যবসায়ী।
এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের অপহরণচেষ্টার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার (১১ জুন) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ঢাকার মোহাম্মাদপুর কাটাসুর এলাকার আ. মান্নান মিয়ার ছেলে স্টেশনারি ব্যবসায়ী রহমান অঙ্কনের (২৬) সঙ্গে দেড় বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও এলাকার দিপু বাইনের মেয়ে পিয়াঙ্কা বাইনের (২৮)। দীর্ঘদিনের আলাপচারিতায় ভারতীয় ওই নারীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল ভালোবাসা দিবসে দুজনের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় খুলনার সোনাডাঙ্গায়। একটি আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে পাঁচদিন থাকার পর ওই নারী ভারতে ফিরে যান। দ্বিতীয়বার একই আবাসিক হোটেলে তারা দেখা করেন।
এদিকে মোংলা বন্দরের নিরাপত্তা প্রহরী জাফরের সঙ্গেও পিয়াঙ্কা বাইনের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাই দুজনে মিলে ব্যবসায়ী রহমানকে অপহরণের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
সর্বশেষ শুক্রবার রহমানের সঙ্গে দেখা করার জন্য পিয়াঙ্কা বাইন মোংলায় আসেন। রহমানকেও মোংলায় আসতে বলেন। ওইদিন দুপুরে প্রেমিক রহমান মোংলায় এসে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে দেখা করেন। তবে সেখানে আগে থেকেই বন্দরের পাঁচ নিরাপত্তা কর্মীসহ কয়েকজন যুবককে অপহরণের জন্য প্রস্তুত করে রাখেন প্রেমিকা পিয়াঙ্কা ও জাফর। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সুন্দরবন দেখানোর কথা বলে কৌশলে একটি জালিবোট (নৌযান) ভাড়া করেন জাফর।
এ সময় অন্যদের সঙ্গে নিয়ে বন্দরের পশুর নদীর মাঝ পথে রহমানকে হাত-পা বেঁধে মারধর শুরু করেন। তাকে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন অপহরণকারীরা। ব্যবসায়ীর সঙ্গে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ও মানিব্যাগসহ অন্যান্য মালামাল ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি নদীতে অন্য নৌযানের কর্মীরা দেখে ফেলায় সেখান থেকে দ্রুত তাকে বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে ওঠানোর চেষ্টা করেন অপহরণকারীরা।
এ সময় ব্যবসায়ী রহমানের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাকে রক্ষা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বন্দরের নিরাপত্তা প্রহরী জামাল হোসেন ও বোটচালক ওবায়দুর হোসেনকে আটক করে। কিন্তু কৌশলে ভারতীয় প্রেমিকা পিয়াঙ্কা বাইন ও অন্যরা সেখান থেকে পালিয়ে যান।
শুক্রবার রাতে বন্দরের পাঁচ নিরাপত্তা প্রহরী, বোটচালক ও ভারতীয় প্রেমিকা পিয়াঙ্কা বাইনকে আসামি করে মোংলা থানায় মামলা করেন ব্যবসায়ী রহমান অঙ্কন। শনিবার দুপুরে আটক দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রেমঘটিত বিষয়ে ঢাকার ব্যবসায়ীকে অপহরণচেষ্টার ঘটনায় বন্দরের কয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরী জড়িত রয়েছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। এছাড়া ভারতীয় প্রেমিকা ও বন্দরের পাঁচ নিরাপত্তা প্রহরীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় আটক দুজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
নদী বন্দর/এসএফ