পরিবেশগত পারফরম্যান্স সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৭তম হয়েছে বাংলাদেশ। এ তালিকায় সবার তলানিতে রয়েছে প্রতিবেশী ভারত। আরেক প্রতিবেশী পাকিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে একধাপ ওপরে। সম্প্রতি প্রকাশিত পরিবেশগত পারফরম্যান্স সূচকের (ইপিআই) দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
বিশ্বের ১৮০টি দেশের পরিবেশগত পারফরম্যান্স তুলনা ও বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে ইপিআই-২০২২। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশের পরিবেশগত পারফরম্যান্সের ওপর নম্বর দিয়ে এই র্যাংকিং নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি ও কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি। গত এক দশকে এসব দেশের পরিবেশগত অবস্থান কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, সেই চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
এবারের র্যাংকিংয়ে পরিবেশগত পারফরম্যান্সে সবার শীর্ষে রয়েছে ডেনমার্ক। তাদের ইপিআই স্কোর ৭৭ দশমিক ৯০। গত এক দশকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটির ইপিআই স্কোর বেড়েছে ১৪ দশমিক ৯০। ৭৭ দশমিক ৭০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। এক দশকে তাদের উন্নতি হয়েছে ২৩ পয়েন্ট।
শীর্ষ দশে থাকা বাকি দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে ফিনল্যান্ড, মাল্টা, সুইডেন, লুক্সেমবার্গ, স্লোভেনিয়া, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড ও আইসল্যান্ড। তাদের পয়েন্ট ৭৬ দশমিক ৫০, ৭৫ দশমিক ২০, ৭২ দশমিক ৭০, ৭২ দশমিক ৩০, ৬৭ দশমিক ৩০, ৬৬ দশমিক ৫০, ৬৫ দশমিক ৯০ এবং ৬২ দশমিক ৮০।
এছাড়া ফ্রান্স ১২তম, জার্মানি ১৩তম, অস্ট্রেলিয়া ১৭তম, ইতালি ২৩তম, নিউজিল্যান্ড ২৬তম, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৩৯তম এবং যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে ৪৩তম স্থানে।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে জাপান। ৫৭ দশমিক ২০ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান ২৫তম। ৫০ দশমিক ৯০ পয়েন্ট নিয়ে ৪৪তম স্থানে সিঙ্গাপুর।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান। ৪৩ দশমিক ৬০ পয়েন্ট নিয়ে ব্রাজিল ও জর্ডানের সঙ্গে যৌথভাবে ৮১তম অবস্থানে রয়েছে তারা। গত এক দশকে আফগানিস্তানের পরিবেশগত পয়েন্ট বেড়েছে ২৩ দশমিক ৯০।
এক দশকে ৭ দশমিক ৯০ পয়েন্ট হারিয়ে ৮৫তম স্থানে ঠাঁই পেয়েছে ভুটান। তাদের বর্তমান পয়েন্ট ৪২ দশমিক ৫০। সমুদ্রবেষ্টিত দেশ মালদ্বীপ রয়েছে তালিকার ১১৩তম স্থানে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা ১৩২তম, নেপাল ১৬২তম, পাকিস্তান ১৭৬তম, বাংলাদেশ ১৭৭তম এবং ভারত রয়েছে ১৮০তম স্থানে।
পরিবেশগত পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২৩ দশমিক ১০। গত এক দশকে দেশটির পয়েন্ট কমেছে ১ দশমিক ৯০। এক্ষেত্রে পাকিস্তান পেয়েছে ২৪ দশমিক ৬০। এক দশকে তাদের পয়েন্ট বেড়েছে ১ দশমিক ৪০। তবে প্রতিবেশী ভারতের পয়েন্ট ০.৬০ কমে দাঁড়িয়েছে সর্বনিম্ন ১৮ দশমিক ৯০।
বাস্তুতন্ত্রের প্রাণশক্তিতে গত এক দশকে ৪ দশমিক ৪০ পয়েন্ট কমেছে বাংলাদেশের। এ বিষয়ে দেশটির সংগ্রহ ২৯ দশমিক ৪০ পয়েন্ট এবং অবস্থান ১৫৯তম।
বাস্তুতন্ত্র পরিষেবায় গত এক দশকে বাংলাদেশ পয়েন্ট হারিয়েছে ১৮ দশমিক ৭০। এ বিষয়ে তাদের সংগ্রহ ১৪ দশমিক ৯০ পয়েন্ট, অবস্থান ১৫৫তম। ফিশারিজে এক দশকে ১০ পয়েন্ট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৫ দশমিক ১০, অবস্থান ২০তম। অ্যাসিডিফিকেশনে গত এক দশকে ১৪ দশমিক ৭০ পয়েন্ট হারিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৯তম স্থানে, সংগ্রহ ২৫ দশমিক ৮০ পয়েন্ট।
স্বাস্থ্যে গত এক দশকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২ দশমিক ৬০ বেড়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ১০, অবস্থান ১৬৬তম। বাতাসের মানের হিসাবে গত এক দশকে বাংলাদেশের পয়েন্ট বেড়েছে ০.২০। ১৪ দশমিক ৪০ পয়েন্ট নিয়ে এক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ১৭৩তম। বিশুদ্ধ পানি পানের ক্ষেত্রে গত এক দেশকে ৫ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বেড়েছে বাংলাদেশের। ২৭ দশমিক ৪০ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি এ তালিকায় রয়েছে ১২৯তম স্থানে।
পরিবেশে ভারী ধাতুর উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত এক দশকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৯ দশমিক ৪০ বেড়ে ২২ দশমিক ৮০ হয়েছে, অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৭২তম। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। এতে গত এক দশকে এক পয়েন্ট বেড়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১০ দশমিক ৫০, অবস্থান ১৬০তম।
জলবায়ু নীতির ক্ষেত্রে কিছুটা অবনতি হয়েছে। এ বিষয়ে গত এক দশকে বাংলাদেশ ১ দশমিক ৬০ পয়েন্ট হারিয়েছে। ১৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান এখন ১৭১তম।
নদী বন্দর/এসএফ