বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার মানেই হচ্ছে তাদের আরো বৈধতা দেওয়া, এটা প্রমাণিত সত্য বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলের প্রসঙ্গ টেনে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক আলোচনাসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, গতকালের নির্বাচন তো আপনারা দেখেছেন। দ্বিতীয়বার আমি আর বলতে চাই না।
এমন ফলাফল যে হবে আমরা বহু আগে থেকেই জানি। যে কারণে বলে দিয়েছি আমরা কোনো নির্বাচনেই যাচ্ছি না। খুব পরিষ্কার করে বলেছি।
গত এক যুগ ধরে একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এই দুইটাকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন করা যায় না। এটা মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। সে জন্য গণতন্ত্র না পেলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আমরা কিভাবে পেতে পারি? সে জন্য আমরা গত কয়েক বছর ধরে বলছি, আমাদের মূল লক্ষ্য গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা।
যারা গণতন্ত্র হরণ করেছে, গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে বাকশাল করে, তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র পেতে পারে না-এটা বাস্তবতা। আওয়ামী লীগের চরিত্রের মধ্যে মানুষের ভিন্নমত সহ্য করবার কোনো কিছু নেই। তাদের মধ্যে একটা বডি কেমিস্ট্রি কাজ করে, বডি কেমিস্ট্রি হচ্ছে একদলীয়, জোর করে সব কিছু আদায় করে নেওয়া, যেটা একইভাবে সব সময় আছে, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য, আমাদের জাতির অস্তিত্বের জন্য, আমাদের এই সংবাদপত্র, আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো, আমাদের বিচার বিভাগ, আমাদের প্রশাসন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা- সব কিছুকে যদি আমরা রক্ষা করতে চাই তাহলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। আমাদের এখন মূল লক্ষ্য গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সে জন্য আমাদের সমস্ত মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে-সব শ্রেণি, সব পেশার মানুষকে জাগিয়ে গণতন্ত্র ফেরানোর যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেই আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে হবে।
খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে অবস্থান করছেন নির্বাসিত হয়ে, আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা- এত কিছুর পরেও আমরা কিন্তু কখনো থেমে নেই। আমরা কাজ করছি এবং চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার এবং দেশকে মুক্ত করার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই। নিঃসন্দেহে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাব এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবই।
বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য তুলে ধরে দলটির মহাসচিব বলেন, বিএনপির সঙ্গে তফাতটা কোথায়? আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হরণ করেছে, সংবাপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছে, মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করেছে। আর বিএনপি সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিয়েছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শাসনামলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সংবাদকর্মীদের জন্য নেওয়া পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন তিনি। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বিদ্যমান ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আসুন দল-মত-নির্বিশেষে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারী, এ দেশের জনগণ মিলে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। তাহলেই মিডিয়ার স্বাধীনতা অর্জিত হবে। তা ছাড়া এ দেশে মিডিয়ার স্বাধীনতা আসবে না।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস যদি আপনারা দেখেন দেখবেন এটা হচ্ছে সংবাদপত্রবিরোধী ইতিহাস, মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিপক্ষের ইতিহাস। তারা সব সময় নির্দেশ করেন এবং তারা গর্ব অনুভব করেন। ফ্যাসিজমের প্রতি অনুরক্ত একটি দল এটা করবে এটা খুব স্বাভাবিক।
বিএফইউজের বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে তারা (সরকার) আরো কিছু নিবর্তনমূলক আইন করতে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করা। শুধু তা-ই নয়, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পরশু দিন যে বক্তব্য রেখেছেন, কী ভয়ংকর একটা বিষয়, সেখানে সাংবাদিকরা কোনো অপরাধ করলে সেটার জন্য ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। প্রেস কাউন্সিলের আইন সংশোধন করে এই ধারা যুক্ত করা হচ্ছে।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আজকে যে ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় বসে আছে তারা বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব নিবর্তনমূলক আইন একেকটি বিষমাখা তীর। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, কায়কোবাদ মিলন, আবদুল আউয়াল ঠাকুর, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বাকের হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
নদী বন্দর/এসএফ