বান্দরবানে তিন দিন ধরে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। আরও কয়েকদিন বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ফলে জেলায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শনিবার (১৮ জুন) সকাল থেকে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
বান্দরবান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মন্ডল বলেন, ১৫ জুন ৪৩, ১৬ জুন ২৪, ১৭ জুন ১৮, ১৮ জুন সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া রোববারও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার কালাঘাটা, কাসেমপাড়া, ইসলামপুর, বনরূপা পাড়া, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকা, স্টেডিয়াম এলাকা, নোয়াপাড়া, কসাইপাড়া, রুমা উপজেলার হোস্টেলপাড়া, রনিনপাড়া, লামা উপজেলার হরিনমারা, তেলুমিয়া পাড়া, ইসলামপুর, গজালিয়া, মুসলিম পাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হরিণঝিরি, টিঅ্যান্ডটি এলাকা, সরই, রুপসীপাড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি, আমতলী, রেজু, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, মনজয় পাড়া, দৌছড়ি, বাইশারীসহ সাত উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে প্রায় ৪০ হাজারেরও অধিক পরিবার।
স্থানীয়দের মতে, উন্নয়নের নামে শুষ্ক মৌসুমে নির্বিচারে পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণ, ইমারত নির্মাণ, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, সড়কে মাটি দেওয়া, নিম্নাঞ্চল ভরাটসহ অপরিকল্পিতভাবে ঝুঁকি নিয়ে গড়ে তোলা হয় বসতঘর। ফলে মাটির রক্ষাস্তর নষ্ট হয়ে বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে ধসে পড়ে সে পাহাড়। এতে পাহাড়ের মাটি চাপা পড়ে ঘটে প্রাণহানির ঘটনা।
বান্দরবান সদরের ক্যাচিং ঘাটা এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী মো. শফিক উদ্দীন বলেন, অর্থের অভাবে কম দামে পাহাড় থেকে জায়গা কিনেছি। ঝুঁকি আছে জেনেও পাহাড়ের নিচে একটু জায়গা সমান করে পরিবার নিয়ে কোনরকমে বসবাস করছি।
ইসলাম পুর এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এ ঘর ছাড়া আমাদের অন্য কোনো সম্বল নাই। তাই বাধ্য হয়েই এখানে বসবাস করছি।’
তথ্য অফিস সূত্রে জানা য়ায়, গত পাঁচ বছরে বান্দরবানে পাহাড় ধসে ২১জন নিহত হন। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় সাতজন, ২৩ জুলাই রুমা সড়কে পাঁচজন, ২০১৮ সালের ৩ জুলাই কালাঘাটায় একজন ও লামায় তিনজন, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই লামাতে একজন, ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় একজন ও ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাইঙ্গ্যা ঝিরিতে একই পরিবারের তিনজন প্রাণ হারান।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কায়েসুর রহমান বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে এরই মধ্যে প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ইউএনও ও পৌর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং করা হচ্ছে।
নদী বন্দর/এসএফ