টানা ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফরিদপুরে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অব্যাহত বৃদ্ধিতে সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের চর অধ্যুষিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার শূন্য পয়েন্ট ৭ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে বিপৎসীমার লেভেল ৮ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার।
এতে জেলার পদ্মা, মধুমতী, আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তবে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, পদ্মা নদীর পানি তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দু’দিনে প্রায় এক ফুট পানি বেড়েছে। এতে ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তিনি আরও বলেন, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাদামসহ অন্যন্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
ওই ইউনিয়নের আইজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার মাসুদ সরদার জানান, পদ্মার পানি বাড়লে কয়েকদিনের মধ্যে অনেক বাড়িতে পানি উঠে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বে। বন্যা মোকাবিলা করতে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
একই ইউনিয়নের কাইমুদ্দিন ডাঙ্গী এলাকার হাজেরা খাতুন (৭০) বলেন, দু’দিন ধইরা যেমন কইরা পানি বাইড়্যা বাইস্যা অ্যয়ে, তাতে বয়্যে (ভয়ে) আছি। কি থ্যাইকা কি অ্যয়ে (হয়ে) যায়।
পদ্মা-সংলগ্ন চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মির্জা সাইফুল ইসলাম আজম বলেন, হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে এ ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এভাবে পানি বাড়তেই থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে পাট ও তিল ক্ষেতও তলিয়ে যাবে। এছাড়া চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৪৫০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
একই উপজেলার ডিক্রির চর ইউনিয়নেসর চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু জানান, আমার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পদ্মা নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে। মানুষ বন্যায় ক্ষতির আশঙ্কায় ভীত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে, ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা জানান, নদ-নদীগুলোতে হঠাৎ বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই পদ্মা, মধুমতী, কুমার ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বাড়ছে। পদ্মার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বিপৎসীমার শূন্য পয়েন্ট ৭ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায় বলেন, ত্রাণসামগ্রী দেওয়ার মতো বন্যা এখনও হয়নি। তবে বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ফরিদপুরের ৯টি উপজেলার ইউএনওকে ৭ টন করে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৫০ টনের বেশি ত্রাণ মজুদ আছে। আশা করছি, বন্যা মোকাবিলায় তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
নদী বন্দর/এসএফ