সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যা দুর্গত এলাকায় পানি কমার সঙ্গে মানুষের কষ্ট বাড়ছে। অনেকেই বাড়িতে ফিরলেও নেই কোনো খাবারের ব্যবস্থা। বিধ্বস্ত বাড়ি মেরামতের পাশাপাশি খাদ্যের সন্ধান করতে হচ্ছে তাদের। এর সঙ্গে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব মহল থেকেই দুর্গত মানুষের জন্য দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ-সহায়তা।
গতকাল মঙ্গলবারও বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ত্রাণসামগ্রী। হেলিকপ্টার থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর ছাদে ফেলা হয়েছে ত্রাণসামগ্রী। এখনো আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণের জন্য শত শত মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
গতকাল সরেজমিনে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বেহালী ও সাজনা বাজার ইউনিয়নে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শত শত মানুষ অপেক্ষা করছেন। কেউ ত্রাণ নিয়ে এলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। অনেকেই জানালেন, এখনো খাবার রান্না করে খাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ফলে ত্রাণের ওপরই তাদের ভরসা করতে হচ্ছে।
বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে তাদের সংকট দিন দিন বাড়ছে। শিশুখাদ্য অনেকেই জোগাড় করতে পারছেন না। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে। গতকাল বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে ৮০০ প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করা হয়। তিনটি হেলিকপ্টার থেকে এসব ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।
প্যাকেটগুলো বিশেষ উপায়ে পানিরোধক আবরণে মোড়কজাত এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে প্যারাস্যুটের মাধ্যমে হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান থেকে ফেলা হয়। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে চাল, ডাল, তেল, মুড়ি, চিড়া, খাবার পানি, গুড়, দিয়াশলাই, ম্যাচ বক্সসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু জিনিসপত্র ছিল।
হেলিকপ্টার থেকে পুরো সুনামগঞ্জকে পানির মধ্যে ভেসে থাকা একটি শহর বলে মনে হয়েছে। কিছু কিছু এলাকা থেকে পানি কিছুটা কমেছে। তবে রাস্তাঘাট এখনো চালু হয়নি। পুরো সড়ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে নৌকার সংকটের কারণে অনেকেই পানি সাঁতরে খাবারের সন্ধানে বের হতে দেখা গেছে। কেউ ত্রাণ নিয়ে গেলে সেখানে বহু মানুষ ভিড় করছেন।
দুর্গম এলাকাগুলোতে কোনো ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না। বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে গতকাল ঐ দুর্গম এলাকাগুলোতেই ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। বিমান বাহিনীর বেল-২১২ হেলিকপ্টারের পাইলট স্কোয়াডন লিডার তানিম শাহ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই একাধিক হেলিকপ্টার নিয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জের দুর্গম এলাকাগুলোতে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই এলাকার মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে আমাদের বাহিনীর প্রধান এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। যত দিন প্রয়োজন আমরা এই মানুষগুলোকে সহায়তা পৌঁছে দেব।’
নদী বন্দর/এসএফ